সদকায়ে জারিয়া সম্পর্কিত হাদিস এবং সদকায়ে জারিয়ার ফজিলত

প্রিয় পাঠক,
আজকে আমরা জানবো দকায়ে জারিয়া কি? সদকায়ে জারিয়া মধ্যে কি কি কাজ সমূহ পড়ে? সদকায়ে জারিয়া কয়টি? সদকায়ে জারিয়া সম্পর্কিত হাদিস।

‘সদকা’ শব্দের অর্থ দান করা। আর ‘জারিয়া’ শব্দের অর্থ অব্যাহত। সদকায়ে জারিয়া হলো- এমন দান যার কার্যকারিতা কখনো শেষ হবে না এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে শরিয়তসম্মত এমন কল্যাণকর কাজে দান করা। 


যেমন- মাদ্রাসা তৈরি, এতিমখানা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, পাঠাগারের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট নির্মাণ করা ইত্যাদি অন্যতম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না- 

  • সদকায়ে জারিয়া, 
  • এমন ইলম-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, 
  • এমন নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। 

    (মুসলিম, হাদিস নং: ৪৩১০)

সদকায়ে জারিয়া হলো: ওয়াক্‌ফ। আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে সেটাই উদ্ধৃত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়; কেবল তিনটি আমল ছাড়া: সদাকায়ে জারিয়া, কিংবা এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় কিংবা এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। [সহিহ মুসলিম (১৬৩১)]

ইমাম নববী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন:
“সদকায়ে জারিয়া হলো- ওয়াক্‌ফ”।[সমাপ্ত][শারহু মুসলিম (১১/৮৫)]
আল-খাত্বীব আশ্‌-শারবিনী বলেন:
“সদাকায়ে জারিয়াকে আলেমগণ ওয়াক্‌ফ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন; যেমনটি বলেছেন রাফেয়ী। ওয়াক্‌ফ ছাড়া অন্যান্য দানগুলো জারী বা চলমান নয়”।[মুগনিল মুহতাজ (৩/৫২২-৫২৩)]

সদকায়ে জারিয়া হলো- ঐ দান ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও যেই দানের সওয়াব অব্যাহত থাকে। পক্ষান্তরে যে সদকার সওয়াব অব্যাহত থাকে না; উদাহরণস্বরূপ গরীবদেরকে খাওয়ানো সেটি সদাকায়ে জারিয়া নয়।

পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে: রোযাদারদেরকে ইফতার করানো, ইয়াতীমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ ও বৃদ্ধাশ্রমের পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ (যদিও সদাকার অন্তর্ভুক্ত হোক না কেন) কিন্তু এগুলো সদাকায়ে জারিয়া নয়। আপনি ইয়াতীমদের জন্য কিংবা বৃদ্ধদের জন্য ঘর নির্মাণে অংশ গ্রহণ করতে পারেন তাহলে সেটা সদাকায়ে জারিয়া হবে। যতদিন এ ঘরের উপযোগিতা থাকবে ততদিন আপনি এর সওয়াব পেতে থাকবেন।

সদকায়ে_জারিয়ায়_যেসব_কাজ_হতে_পারেঃ-

  • এতিমের লালন-পালনের দায়িত্ব নেওয়া। 
  • মসজিদ নির্মাণ কিংবা মসজিদের প্রয়োজনীয় আসবারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। 
  • প্রয়োজনীয় এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়া। 
  • কোরআন শিক্ষা দেওয়া বা কোরআন শিক্ষা ব্যবস্থাপ করে দেওয়া।
  • অসহায়-দুঃস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থায় হাসপাতাল নির্মাণ কিংবা চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়া। 
  • কবরস্থানের জন্য জমি দান করা কিংবা জমি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা করা। মৃতদের সৎকারের খরচ জোগানো কিংবা বহনের জন্য এ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ে সাহায্য করা। 
  • মুসলমানদের কল্যাণে আসে এমন ইসলামি বই-তাফসির, হাদিস, ফিকাহ শাস্ত্রের বই-পুস্তক মুদ্রণ কিংবা বিতরণে সহায়তা করা। 
  • অত্যাচারিত মুসলমান সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানো। 
  • গাছ লাগানো, যেটার ফল ও অক্সিজেনের মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে ইত্যাদি।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: নিশ্চয় মুমিনের মৃত্যুর পর যে আমল ও যে নেকী তার কাছে পৌঁছে সেটা হলো এমন ইল্‌ম যা সে শিখিয়ে গেছে কিংবা প্রচার করে গেছে, কোন নেক সন্তান রেখে গেছে, কোন মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) রেখে গেছে কিংবা কোন মসজিদ বানিয়ে গেছে কিংবা মুসাফিরের জন্য কোন ঘর বানিয়ে গেছে কিংবা কোন নদী খনন করে গেছে কিংবা তার সুস্থতাকালে ও জীবদ্দশায় নিজের সম্পদ থেকে কোন সদকা করে গেছে তার মৃত্যুর পরেও যা তার কাছে পৌঁছে।[সুনানে ইবনে মাজাহ (২৪২); মুনযিরি ‘আত্‌-তারগীব ওয়াত তারহীব’ গ্রন্থে (১/৭৮) বলেন: এর সনদ হাসান। আলবানী হাদিসটিকে ‘সহিহু সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে ‘হাসান’ বলেছেন।]

একজন মুসলিমের জন্য বাঞ্ছনীয় হলো বিভিন্ন খাতে সদকা করা; যাতে করে প্রত্যেক শ্রেণীর নেক আমলকারীদের সাথে তার একটি ভাগ থাকে। তাই আপনি আপনার সম্পদের একটি অংশ রোযাদারদের ইফতার করানোর জন্য বরাদ্দ করুন। অপর একটি অংশ ইয়াতীমদের প্রতিপালনের জন্য বরাদ্দ করুন। তৃতীয় একটি অংশ বৃদ্ধাশ্রমের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বরাদ্দ করুন। চতুর্থ একটি অংশ দিয়ে মসজিদ নির্মাণে অংশ গ্রহণ করুন। পঞ্চম একটি অংশ দিয়ে বই ও মুসহাফ বিতরণের জন্য রাখুন...।

পৃথিবীতে আমরা কেউ চিরস্থায়ী নই। সকলকে চলে যেতে হবে। যাওয়ার সময় কেউ সঙ্গে যাবে না। যাবে শুধু নিজের কৃত আমল। কিয়ামতের দিন কঠিন সময়ে তারাই মুক্তি ও সফলকাম হবে যাদের সৎ আমলের পাল্লা ভারি হবে। আর মৃত্যুর পরও সৎ আমলের পাল্লা ভারি হতে পারে একমাত্র সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে।

হাদিসে বর্ণিত আছে, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার আমলের সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি আমল চালু থাকে। ক. সদকায়ে জারিয়া, খ. ইলম, যার দ্বারা মানুষের উপকার হয় ও গ. সুসন্তান, যে পিতামাতার জন্য দোয়া করে। 
-সহিহ মুসলিম শরিফ-

আর আজকে আমরা আলোচনা করছি সদকায়ে জারিয়া নিয়ে। সদকায়ে জারিয়া হলো- এমন দান যার কার্যকারিতা কখনো শেষ হবে না এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ এই পৃথিবী যত দিন থাকবে তত দিন পর্যন্ত কবরে শুয়ে শুয়ে সদকাকারী ব্যক্তি এর সওয়াব পেতেই থাকবে। বিধায় প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সদকায়ে জারিয়ার আমলের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা। তবে দান কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নয় বরং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে করতে হবে।
Next Post
No Comment
Add Comment
comment url