বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা এবং দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা

শিশুর বয়স ও দৈনিক শক্তি চাহিদা অনুসারে খাদ্য তালিকা

শিশুর বয়স

দৈনিক শক্তি চাহিদা

খাদ্য তালিকা

প্রথম দুই মাস

92 kcal/kg

অথার্ৎ প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৯২ কিলোক্যালোরি শক্তি

দুই থেকে তিন ঘন্টা অন্তর কেবল মাত্র মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো।

তৃতীয় ও চতুর্থ মাস

দিনে তিন-চার ঘন্টা অন্তর মায়ের দুধ খাওয়ানো। রাত্রে এগারেটার পর চার-পাঁচ ঘন্টা বিরতি।

পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাস

সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার ঘন্টা অন্তর মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো। রাত্রে এগারোটার পর পাঁচ-ছয় ঘন্টা বিরতি। ষষ্ঠ মাসে অন্নপ্রাশন বা আকিকা।

সপ্তম ও অষ্টম মাস

80 kcal/kg

অথার্ৎ প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৮০ কিলোক্যালোরি শক্তি

মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে গলা বাত, আলুসেদ্ধ, ডালসেদ্ধ, ফলের রস।

নবম ও দশম মাস

মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে নরম ভাত, ডাল, সবজি, নরম ফুলকো রুটি, ডিমের কুসুম ও নরম মাছ, সঙ্গে ফলের রস। বিভিন্ন শাকসবজির সবুজ পাতা ও ডাল দিয়ে খিচুরী।

একাদশ ও দ্বাদশ মাস

মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, ডিম, মাছ, নরম মুরগির মাংস, ছানা, দই, ফলের রস প্রভৃতি।

মাতৃদুগ্ধের প্রকারভেদ-

বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা

মাতৃদুগ্ধ প্রধানত দুই প্রকারের হয় যথা- 

১। কোলোস্ট্রাম এবং ২। পরিণত দুধ।

কোলোস্ট্রাম (Colostrum): সন্তান প্রসবের পর বেশ কয়েকদিন ধরে মায়ের ন্ততনগ্রন্থি থেকে এক বিশেষ প্রকারের হলুদ রঙের আঠালো রস অল্প পরিমাণে ক্ষরিত হতে থাকে। একে কোলোস্ট্রাম বলে। অথবা, শিশু জন্মের পর থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত (প্রায় তিন-চার দিন) মায়ের স্তনগ্রন্থি থেকে এক প্রকার হলুদ বর্ণের আঠালো তরল পদার্থ সামান্য পরিমাণে ক্ষরিত হতে থাকে, একে কোলোস্ট্রাম বলে।

কোলোস্ট্রামে উপস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান: কোলোস্ট্রামে পরিণত মাতৃদুগ্ধের তুলনায় অল্প পরিমাণ স্নেহপদার্থ এবং অধিক পরিমাণে প্রোটিন থাকে। কোলোস্ট্রামের মধ্যে ট্রিপটেফ্যান নামে এক বিশেষ প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড খুব বেশি পরিমাণে থাকে। এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। কোলোস্ট্রামের মধ্যে প্রোটিন ছাড়াও অন্যান্য পরিপোষক উপাদান, খনিজ পদার্থ এবং কয়েক প্রকার ভিটামিন উপযুক্ত পরিমাণে থাকে। এই ভিটামিনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রেটিনল (ভিটামিন- A), ক্যালসিফেরল (ভিটামিন- D) এবং সায়ানোকোবালামিন (ভিটামিন- B12) কোলোস্ট্রামে ইনটারফেরন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কোলোস্ট্রামের এইসব উপাদান শিশুর দেজেহ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং উপযুক্ত মাত্রায় ক্যালোরি সরবরাহ করে। কোলোস্ট্রাম পুষ্টিগুণেও খুবই সমৃদ্ধ হয়। এতে দস্তার পরিমাণ 20 mg/L, যেখানে স্বাভাবিক মায়ের দুধে দস্তার পরিমাণ 5.3 mg/L,|

কোলোস্ট্রামের উপকারিতা: নবজাতক কোলোস্ট্রাম পান করলে তার যকৃতে ভিটামিন A সঞ্চিত হয়। কোলোস্ট্রামের মধ্যে উপস্থিত কয়েক প্রকার রোগপ্রতিরোধক পদার্থ শিশুকে হাম, বসন্ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিও প্রভৃতি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এক কথায় কোলোস্ট্রাম শিশুর দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং শিশুকে দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা প্রদান করে।

কোলোস্ট্রামে উপস্থিত পরজীবী প্রতিরোধকারী (অনাক্রম্যতাজনিত) উপাদান

১। ইমিউনোগ্লোবিউলিন (Immunoglobulin) : মাতৃদুগ্ধে ইমিউনোগ্লোবিউলিন অ্যান্টিবডিরূপে কাজ করে। মাতৃদুগ্ধে অধিক পরিমাণে থাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন A বা IgA অ্যান্টিবডি, বাকি IgG ও IgM অল্প পরিমাণে থাকে। IgA, বিভিন্ন রাগ সৃষ্টিকারী জীবাণু, বিশেষ করে Ecoli ব্যাকটেরিয়া, পোলিও ভাইরাস, স্ট্রেপটোকক্কাই, নিউমোকক্কাই ধ্বংস করে। প্রতি মিলি কোলোস্ট্রামে 20-40 mg (20-40 mg/ml) এবং প্রতি মিলি পরিণত দুধে (mature milk1 mg (1 mg/ml) IgA থাকে

২। লাইসোজাইম (Lysozyme): প্রতি মিলি মাতৃদুগ্ধে 2 mg (2mg/ml) লাইসোজাইম থাকে, যা ব্যাকটেরিয়ার প্রাচীর বিদীর্ণ করে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।

৩। ল্যাক্টোপারক্সিডেজ (Lactoferrin)স্ট্রেপটোকক্কাই জীবাণু ধ্বংসে সাহায্য করে।

৪। ল্যাক্টোফেরিন (Lactoperoxidase)এটি একটি লৌহ যৌগঘটিত প্রোটিন, যা মাতৃদুগ্ধে প্রচুর পরিমাণে থাকে। এর কাজ হল EColi ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়া।

৫। শ্বেতকণিকা (Lymphoid cells): মাতৃদুগ্ধে বিভিন্ন ধরনের শ্বেতকণিকা বর্তমান। এদের মধ্যে লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা ওমঅ উৎপন্ন করে। নিউট্রোফিল ও ম্যাক্রোফেজ, ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণু ধ্বংস করে।

৬। ল্যাক্টোব্যাসিলাস বাইফিডাস ফ্যাক্টর (Lactobacillus bifid us factor): মাতৃদুগ্ধে নাইট্রোজেন ঘটিত পলিস্যাকারাইড বাইফিডাস ফ্যাক্টর নামক এক উপকারী জীবাণু বৃদ্ধি সহায়ক উপাদান থাকে, যা শিশুর অস্ত্রে ল্যাক্টোব্যাসিলাস বাইফিডাস ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটিয়ে উদরাময় সৃষ্টিকারী জীবাণুদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।

৭. মনোগ্লিসারাইড ও ফ্যাটি অ্যাসিড (Lactobacillus bifid us factor): মাতৃদুগ্ধে উপস্থিত মনোগ্লিসারাইড ও ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর দেহে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।

* পরিণত দুধ (Matured milk): কোলোস্ট্রাম ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে পরিণত দুধের রূপ পায় মায়ের পরিণত দুধই মাতৃদুগ্ধ নামে পরিচিত। পরিণত দুধে শিশুর পুষ্টির জন্য অপরিহার্য পরিপোষক উপাদান, হরমোন উৎসেচক, গ্লোবিউলিন ইত্যাদি উপস্থিত থাকে।

* পরিণত দুধে উপস্থিত বিভিন্ন পরিপোষক উপাদান: 

পরিণত দুধে 44% জল ও বাকি 12% বিভিন্ন প্রকার পৌষ্টিক উপাদান থাকে। প্রতি 100 ml পরিণত দুধে অর্থাৎ মায়ের দুধে 7g শর্করা, 1.1g প্রোটিন এবং 3.5g স্নেহপদার্থ থাকে। তা ছাড়া, প্রতি 100 ml মাতৃদুগ্ধের পুষ্টিমূল্য 67 থেকে 71kcal । প্রতি ১০০সষ মাতৃদুগ্ধে 0.3 ল্যাকট্যালবুমিন থাকে। ল্যাকট্যালবুমিনের আমিনো অ্যাসিড সজ্জা দেহজ প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় সেটি সহজে পাচিত ও শোষিত হতে পারে। অন্যদিকে, গোরুর দুধে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি (শতকরা 3.3g) হওয়ায় ত সহজে হজম হয় না। তা ছাড়া, গোরুর দুধে 80% কেসিন থাকায় তা অর্ধকঠিন দই-জাতীয় পদার্থে পরিবর্তিত হয় এবং সহজে পাচিত ও শোষিত হতে পারে না। মাতৃদুগ্ধে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সুষমভাবে থাকে। প্রতি 100 ml পরিণত দুধে 137 ক্রম ক্যারোটিন, 0.02 mg সম থায়ামিন, 0.02 mg রাইবোফ্লেভিন এবং 1.2-11 mg অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে। তবে সেগুলির পরিমাণ নির্ভর করে মায়ের উপযুক্ত পরিমাণ খাদ্যগ্রহণের ওপর। মাতৃদুগ্ধকে গরম করার প্রয়োজন হয় না, তাই ভিটামিন B কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন C-এর পুষ্টিগুণ উপযুক্তমাত্রায় বজায় থাকে। মাতৃদুগ্ধ ফোলিক অ্যাসিডের শোষণও বৃদ্ধি করে। গোরুর দুধের তুলনায় মায়ের দুধে ভিটামিন A, C এবং E অধিক পরিমাণে থাকে। মাতৃদুগ্ধের অপর একটি পুষ্টিগত গুরুত্ব হল, এতে ক্যালশিয়াম এবং ফসফরাস উপযুক্ত পরিমাণে থাকে। প্রতি 100 ml মাতৃদুগ্ধে 33 সম ক্যালশিয়াম এবং 15 mg ফসফরাস থাকে। মাতৃদুগ্ধে উপস্থিত লৌহ খুব ভালোভাবে শিশুর দেহে শোষিত হয়। এতে তামার পরিমাণও বেশি থাকে। মাতৃদুগ্ধে থাকা ল্যাকটোজ শিশুর দেহে জিংক ও ক্যালশিয়ামের শোষণ বৃদ্ধি করে। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url