আজওয়া খেজুরের উপকারিতা বা আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক,

আজকে আমরা জানবো আজওয়া খেজুরের উপকারিতা। আজকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, তাই লেখাটি মনযোগের সাথে পড়ে আমাদের সাথেই থাকুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞার্নাজন করুন।

আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। এগুলো মিষ্টি বন্ধুর মতো, যা না শুধু স্বাদে ভালো বলে, তারা স্বাস্থ্যের জন্যও খুব ভালো ও অনেক উপকারি। এগুলো মধুর স্বাদ এবং আরোগ্যকর জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পোষণ সরবরাহ করে। খেজুর শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং প্রতি দিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে।

একইভাবে, খেজুরে অনেক উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু এর অপকারিতাও রয়েছে। এগুলি আপনার ডায়েটে যোগ করার আগে বিবেচনা করা জরুরী যেন আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আজওয়া খেজুরের অনেক উপকারি দিক রয়েছে এবং আজওয়া খেজুর আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর একটি প্রিয় খেজুর ছিলেন এবং এই খেজুরটি নিয়ে তাঁর অনেক হাদিসও রয়েছে।

রাসুল (সাৎ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালবেলা সাতটি আজওয়া (উৎকৃষ্ট) খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও জাদু তার ক্ষতি করবে না। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে বা কোনো জটিল রোগ আছে, তাদের উচিত এটা খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া। কারণ আজওয়া খেজুর হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী ওষুধ।

প্রিয় নবী (সাঃ)-এর প্রিয় ফল খেজুর। পবিত্র কুরআনে ২৬ বার খেজুরের কথা উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে বৃক্ষ-তরুলতার বিবরণ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জমিনে উৎপন্ন করেছি শস্য-আঙুর, শাক-সবজি, জয়তুন ও খেজুর বৃক্ষ’। (সুরা আবাসা, আয়াত : ২৭)

আবারও বলা হয়েছে, ‘খেজুর ও আঙুর থেকে তোমরা সাকার ও উত্তম খাদ্য তৈরি করো।

নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য এতে নিদর্শন আছে’। 
(সুরা নাহল, আয়াত : ৬৭)

সুরা আন’আমের ৯৯ নম্বর, সুরা মরিয়মের ২৩ নম্বর আয়াতেও খেজুরের উপকারিতা বর্ণনা রয়েছে। সাধারণত প্রিয় নবী (সাঃ) সাতটি খেজুর দিয়ে নাশতা করতেন। তিনি পবিত্র রমজানে সবাইকে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতে বলতেন।

তিনি বলতেন, ‘যদি কারো ঘরে কিছু খেজুর থাকে, তবে তাকে গরিব বলা যাবে না’। প্রাথমিক অবস্থায় কুরআনুল কারিম সংকলনে খেজুর পাতা ব্যবহৃত হয়।’

প্রিয় নবী (সাঃ) নিজেই আজওয়া খেজুরের বীজ রোপণ করেছিলেন। এ খেজুর বিশেষভাবে বরকতময়।

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খুরমা খাবে ওই দিন রাত পর্যন্ত কোনো বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করবে না।’
অন্যরা বলেছেন, ‘সাতটি খুরমা’। (বুখারি) 

প্রিয় নবী (সাঃ) আরো বলেন, ‘খোদ জান্নাত থেকে আজওয়া খেজুর এসেছে’। (তিরমিজি)

সালমান ফারসি (রাঃ)-এর মালিক ছিল একজন ইহুদি।

তিনি যখন মুক্তি চাইলেন তখন ইহুদি শর্ত দিল যে যদি তিনি নির্দিষ্ট কয়েক দিনের মধ্যে নগদ ৬০০ দিনার দেন এবং ৩০টি গাছ রোপণ করেন এবং গাছে খেজুর ধরলেই সালমান ফারসি (রাঃ)-এর মুক্তি।

সালমান (রাঃ)-এর পক্ষে ৬০০ দিনার জোগাড় করা কঠিন। খেজুরগাছ রোপণ করে তাতে ফল ধরা, ফল পাকানো অনেক সময়ের ব্যাপার কথা। তখন প্রিয় নবী (সাঃ) ৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করে ইহুদির কাছে গেলেন।

ইহুদি বলল, খেজুর থেকে চারা উৎপন্ন করে তবে ফল ফলাতে হবে। প্রিয় নবী (সাঃ) দেখলেন, ইহুদির খেজুরগুলো সে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলছে। প্রিয় নবী (সাঃ) খেজুরের কাঁদি হাতে নিয়ে আলী (রাঃ)-কে গর্ত করতে বললেন। 

সালমান ফারসি (রাঃ)-কে বলেন পানি আনতে।

আলী (রাঃ) গর্ত করলে প্রিয় নবী (সাঃ) নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পোড়া খেজুর রোপণ করলেন। প্রিয় নবী (সাঃ) সালমান (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন যে বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত তুমি পেছন ফিরে তাকাবে না। সালমান (রাঃ) পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে লাগলেন। বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি তাকিয়ে দেখলেন যে প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ। এ খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর এবং স্বাদের দিক দিয়েও সবচেয়ে সুস্বাদু।

বিজ্ঞানীদের মতে আজওয়া খেজুরে আছে-

‘আমিষ, শর্করা, প্রয়োজনীয় খাদ্য আঁশ ও স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট। এ ছাড়া ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং অন্যান্য খাদ্যপ্রাণ। ভিটামিন ‘এ’ এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ক্যারোটিন’ রয়েছে আজওয়া খেজুরে। ক্যারোটিন চোখের সুস্থতার জন্য জরুরি ও উপকারী।

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা

এ ছাড়া আজওয়া খেজুর সম্পর্কে আরো অবাক তথ্য হলো:

  • স্নায়বিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • লিভার ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খেজুর দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি ও এজমায় উপকারী।
  • উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাটসম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
  • ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে।
  • অন্তঃসত্ত্বারা সন্তান জন্মের সময় আজওয়া খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন ও প্রসারণ ঘটিয়ে প্রসব হতে সাহায্য করে।
  • ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
  • প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
  • খেজুরের ফাইবার কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি দেয়।
  • আছে ৭৭.৫ শতাংশ কার্বহাইড্রেট, যা খাদ্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজ করে।
  • আছে ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ যা হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে।
তাই নিঃসন্দেহে বলাই যায় যে, আজওয়া খেজুরের গুণাগুণা অনেক বেশি ও অপরিসীম এবং এর গুণাগুণের শেষ নেই বললে চলে। খেজুরের মধ্যে এই আজওয়া খেজুর খুবই উপকারি ও পুষ্টিসম্পন্ন খেজুর এবং এর ভূমিকা আমাদের জন্য অনেক বেশি। 

আমরা আশা করছি আমাদের পোস্টটি পড়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পেয়েছেন এবং আজওয়া খেজুরের উপকারিতা | আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url