বয়ঃসন্ধিকাল কি ও বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্য

বয়ঃসন্ধিকাল কি ও বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্য

বয়ঃসন্ধিকাল শব্দটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। তবে আমরা অনেকেই শব্দটি শুধু নামেই চিনি তবে বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে জানিনা। আজকে আমরা উক্ত লেখার মাঝে বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু তুলে ধরবো। আশা করি আপনারা সকলে আমাদের সাথে থাকবেন এবং যে-সকল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে সেই বিষয়গুলো আপনি জানলে আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে-শুনে জানালে সকলের অনেক উপকার হবে এবং উক্ত সময় পরিবারের কিরূপ দায়িত্ব তাঁদের সন্তানের উপর তাও আলোচনা করা হবে। চলুন তবে শুরু করা যাক।

প্রথমত জানিয়ে রাখি আমরা বয়ঃসন্ধিকাল বিষয়টি নিয়ে কি-কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তবে আপনাদের সকলের সুবিধা হবে।
  1. বয়ঃসন্ধিকাল কি বা বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে?
  2. বয়ঃসন্ধিকাল বয়সসীমা কত?
  3. বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যত্ন?
  4. বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শারীরিক পরিবর্তন?
  5. বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন?
  6. বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন?
  7. বয়ঃসন্ধিকালে কি কি সমস্যা দেখা দেই?
  8. বয়ঃসন্ধিকালে জীবন-যাপন করতে কেমন লাগে?
  9. বয়ঃসন্ধিকালে কীরূপ কাজ করতে বেশি করতে ইচ্ছে করে?
  10. বয়ঃসন্ধিকালে করণীয় কি?
এগুলো প্রতিটি আমাদের কাছে প্রশ্ন এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আজকে আমরা উক্ত লেখার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

১। বয়ঃসন্ধিকাল কি?

উত্তর: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী জীবনের ১০-১৯ বৎসর সময়টাই হলো কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল। শৈশব ও যৌবনের এই সন্ধিক্ষণে ছেলেমেয়েদের শারিরীক ও মানসিক পরিবর্তন হয় ও তারা প্রজননক্ষম হয়।

২। বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে?

উত্তর: বয়ঃসন্ধি হলো জীবনের একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষের শরীর শিশু অবস্থা থেকে কিশোর অবস্থায় পৌঁছায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ বছর থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে বা মেয়েকে কিশোর বা কিশোরী হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর যেকোনো সময়ে বয়ঃসন্ধি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। অনেক সময় ১৯ বছরের পরও বয়ঃসন্ধির ব্যাপ্তি থাকে। এটি নির্ভর করে দেশ, সংস্কৃতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের ওপর। সাধারণত মেয়েদের বয়ঃসন্ধি, ছেলেদের চেয়ে কিছুটা আগে শুরু হয়। মূলত ৮ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় তা হতে পারে। অন্যদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি আসে ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে।

৩। বয়ঃসন্ধিকালে বয়সসীমা?

উত্তর: বয়ঃসন্ধিকাল শুরু: চিকিৎসকদের মতে, মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল, ছেলেদের চাইতে কিছুটা আগে শুরু হয়। মূলত ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় তা হতে পারে। অন্যদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল আসে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে।

* বয়ঃসন্ধিকাল শেষ: দশ বছর বয়সে শুরু হয়ে তা চলে ২৪ বছর পর্যন্ত। এর আগে উনিশ বছর বয়সকেই বয়ঃসন্ধিকালের শেষ সীমা বলে মনে করা হতো। কেন মানুষের বয়ঃসন্ধিকাল বলে সময়টার মেয়াদ বাড়ছে, তার নানা কারণ দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

৪। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের কীরূপ পরিবর্তন ঘটে?

উত্তর: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়, যেমন- দ্রুত লম্বা হওয়া, শরীরের গঠন পরিবর্তন হওয়া, একটু বেশি ঘাম হওয়া, ত্বক তৈলাক্ত হওয়া, ব্রণ ওঠা ইত্যাদি। এ সময় শরীরের ওজনও বৃদ্ধি পায়।

ছেলেদের গলার স্বরের পরিবর্তন হয়, মাংসপেশি সুগঠিত হয় এবং দাড়ি-গোঁফ গজাতে শুরু করে। এ সময় মেয়েদেরও মাংসপেশি সুগঠিত হতে শুরু করে, তবে তা ছেলেদের চেয়ে কম। বয়ঃসন্ধিকালে আবেগের দিক থেকে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। এ সময় অনেকেই খুব আবেগপ্রবণ হয় বা অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়ে। আবার শারীরিক পরিবর্তন দেখে অনেকে দুশ্চিন্তায় ভোগে। এ সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরি। মনে রাখা প্রয়োজন, বয়ঃসন্ধিকাল সবার জীবনেই আসে। কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল কৌতূহলের বয়স । নিজের শরীর সম্পর্কে জানতে চাওয়া ভালো এবং এতে লজ্জা পাবার কিছু নেই । কিছু জানতে ইচ্ছা করলে বা কিশোর-কিশোরীরা কোনো সমস্যায় পড়লে বাবা-মা বা বড়দের সাথে এ ব্যাপারগুলো আলাপ করতে অস্বস্তি বোধ করে এবং সমবয়সি বা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে । এ বয়সে ছেলেমেয়েরা বন্ধুদের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়, বন্ধুদেরকে বেশি গুরত্ত্ব দেয়, বন্ধুদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। বন্ধু তাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে । তাই ভাল বন্ধু নির্বাচন করা খুব দরকার।

৫। বয়ঃসন্ধিকালে কি কি সমস্যা দেখা দেই?

উত্তর: বয়ঃসন্ধিকালে অনেক মানুষের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। যেমন শারীরিক অসুবিধা, মাথা ঘুম না আসা, দৃঢ় হৃদয়বাদ, দুর্বল হাত-পা, চোখের সমস্যা, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, গোটা মানসিক অবস্থায় অনিয়ম, মানসিক চাপ এবং দুঃস্থ পাচনের সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যাগুলি বয়ঃসন্ধিকালে সাধারণভাবে দেখা যায়। সমস্যাগুলির সঙ্গে প্রতিদিনের কাজে অসুবিধা হয়ে উঠতে পারে, তাই বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক যত্ন নেয়া উচিত। মুখে দাড়ি-গোঁফ ওঠে সেইসঙ্গে শরীরের নানা জায়গায় বিশেষ করে, বুকে, বাহুমূলে ও যৌনাঙ্গে লোম গজায়। এই সময়ে ছেলেরা একটু বেশি ঘামে। বয়ঃসন্ধির এই সময়টা ছেলে মেয়ে উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা বিকাশ হতে থাকে বলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ হয়। অনেক সময়ে ঘুমের মধ্যে ছেলেদের বীর্যস্খলন হয়ে থাকে।

৬। বয়ঃসন্ধিকালে জীবন-যাপন করতে কেমন লাগে?

উত্তর: বয়ঃসন্ধিকাল, মানব জীবনের একটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী পর্ব। এই পর্বে জীবনের নতুন একটি ধারা চলে আসে, যেখানে সময়ের সাথে মিলিয়ে বয়সের সমস্যা, আন্তর্জাতিক মানের ব্যতিক্রম এবং নিজের মাঝে যৌথভাবে সম্পূর্ণ বোধগম্য সত্তা পেতে। বয়সের সাথে সমস্যায়োগ হলে স্বাস্থ্য সম্পর্কে আত্মসংবেদনা এবং সাবধানতা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত চিকিৎসা, সঠিক খাবার এবং শারীরিক কার্যকলাপের অধিকতর মানে দেখা যায় বয়সের সমস্যা সমাধানে। বয়সের দিনে মানসিক সুস্থতা বিষয়ে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। আত্মসম্মান এবং অস্থিরতা এই সমস্যার এক অংশ। সমাজের থেকে দূরত্ব এবং একাকিত্বের সমস্যা বয়ঃসন্ধিকালে একটি বড় সমস্যা। সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার এবং যত্নশীলদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সহায়তা ও সমর্থন বৃদ্ধদের জীবনকে সহজ এবং সুখী করে।

৭। বয়ঃসন্ধিকালে কীরূপ কাজ করতে বেশি করতে ইচ্ছে করে?

উত্তর: বয়ঃসন্ধিকালে বেশি বেশি ঝুকিপূর্ণ কাজ করতে ইচ্ছে করে। মনে হবে সকল জায়গায় নিজের একটি দাপট দেখাতে ইচ্ছে করে, সকল জায়গাতে নিজেকে জড়াইতে ইচ্ছে করবে, সকল প্রকার কাজ করতে ইচ্ছে করে। তবে এগুলো থেকে আমরা বেঁচে থাকবো। যতটুকুর পারি ঝুকিপূর্ণ কাজ বা ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় নিজেকে বেশি জড়াবো না।

৮। বয়ঃসন্ধিকালে করণীয় কি?

উত্তর: বয়ঃসন্ধিকালীন সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ ও যৌনরোগ সম্পর্কে জানা ও প্রতিরোধ করার জ্ঞান থাকা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালে বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে অপুষ্টিতে ভোগে। কারণ স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে বেশিরভাগ পরিবার সচেতন নয়।

৯। বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যত্ন কিভাবে নিবো?

উত্তর: এ সময় অনেকেই খুব আবেগপ্রবণ হয় বা হতাশ হয়ে পড়ে। শারীরিক পরিবর্তন দেখে দুশ্চিন্তায় ভোগে। এ সময় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরী। বয়ঃসন্ধিকাল সবার জীবনেই আসে।তাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে মা-বাবা, শিক্ষক কিংবা বড়দের সাথে পরামর্শ করতে হবে। 

পরিবারের ভূমিকার কেমন হওয়া প্রয়োজন:

বয়ঃসন্ধিতে থাকা ছেলে মেয়েরা ভীষণ কৌতূহলপ্রবণ হওয়ায় অনেক সময় তাদের বিপথগামী হওয়ার, মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়া, অযাচিত ঝুঁকি নেয়া বা অপসংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে।

আবার এই বয়সটায় স্বাধীন আত্মপরিচয় গড়ে ওঠায় তারা সব কিছু নিয়ে ভীষণ সংবেদনশীল থাকে।
তাই তাদের সঠিক পথে রাখতে পরিবারকে কৌশলী ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

"এই বয়সটাতে ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের চাইতে বন্ধুবান্ধবদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। অনেকেই বাবা মায়ের বাধা মেনে নিতে পারে না, রেগে যায়। এ বিষয়গুলো বাবা মায়ের পক্ষে নেয়াও কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু তাদের ধৈর্য হারালে চলবে না। তাদের আচার আচরণের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।"

এক্ষেত্রে সন্তানের সাথে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া বা কোনভাবেই সেসব গায়ে তোলা যাবে না। এছাড়া তুলনা করা, ছোট করে কথা বলা যাবে না বলে মনে করেন মিস সরকার।

"তার মানে এই নয় যে তারা যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে। বরং সন্তানের পছন্দ, অপছন্দের প্রতি সম্মান জানিয়ে সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে। যেন তার আত্মসম্মানে আঘাত না আসে আবার ভাল-মন্দের ব্যবধানটাও বোঝানো যায়।"

এই বয়সে ছেলে মেয়েদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মিস সরকার।

"বাচ্চাদের একটু একটু করে ছাড়তে হবে। শিশুদের মতো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তার ব্যাগ চেক করা, মোবাইল চেক করা, ডায়রি খুলে পড়া এসব করা যাবে না। বন্ধুবান্ধবের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করা যাবে না। তবে তারা কী করছে, কাদের সাথে মিশছে সেটা অন্যভাবে সুপারভিশন করতে হবে। না হলে তারা বাবা মার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটা হারিয়ে ফেলবে।"
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url