হযরত আলী রাঃ এর ঘটনা - হযরত আলী


প্রিয় পাঠক,

আজকে আমরা জানবো ইসলামের চতুর্থ খলিফা শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) কতটা শক্তিশালী ছিলেন এবং তাঁর বীরত্বের ঘটনা:

হযরত আলী রাঃ এর ঘটনা

শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) এর কাছে থাকা জুলফিকার তরওয়াল ছিল পুরো বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে শক্তিশালী তরওয়াল। এই তরওয়ালের মাধ্যমে হযরত আলী (রাঃ) এক যুদ্ধে 20,000 (বিশ হাজার) জ্বীনকে হত্যা করেছেন। ইতিহাস বলে যুদ্ধের নামটি ছিল- বিরউল আলম যুদ্ধ।

আবু সাইদ খুদরি (রাঃ) হতে বর্নিত:-

একদিন নবি করিম (ﷺ) যুদ্ধ করে বাড়ী ফেরার পথে তাঁর সাহাবীদের নিয়ে একটি জনশূন্য স্থান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন নবি করিম (ﷺ) বললেন যে,  এটি কোন জায়গা? উত্তরে ওমার বিন উম্মাইয়া বললেন যে, “এটি ওয়াহিয়ে আরজাক বলা হয়ে থাকে, এখানো একটি কুপ আছে আর যেখানে কেউ সেই কুপের ধারের কাছেও যায়না। এই কুপে সেই সকল জ্বীনেরা বসবাস করে যাঁরা হযরত সোলাইমান (আঃ) এর নিকট হতে পালিয়ে এসেছেন। তারা ওয়াদা করেছে যে, তাঁরা কখন সোলাইমান (আঃ) ভস্সতা শিকার করবে না এবং সব-সময় ইসলামের বিরুদ্ধে থাকবে। আর এই জ্বীনেরা এখানে তাঁদের বসতি স্থাপন করেছে এবং ইতিহাস বলে যে, এই জ্বীনেরা হযরত সোলাইমান (আঃ) এর দশ হাজার সৈন্যদের এখানে হত্যা করে।”

নবি করিম (ﷺ) এই কথা শুনে বললেন, ও আচ্ছা- এই সেই স্থান যেখানে জ্বীনেদের বসবাস। তারপর নবি করিম (ﷺ) বললেন যে, “তাহলে সকলে থেমে যাও”, রাসুল (ﷺ) এই কথা শুনে কিছু সাহাবি ভয় পেয়ে গেলেও পুরো সাহাবির কাফেলা ওখানে থেমে গেলেন। তারপর নবি করিম (ﷺ) বললেন, “তোমাদের মধ্যে 10 (দশ) জন সামনে এগিয়ে এসো এবং সেই কুপ থেকে পানি তুলে নিয়ে আসো।” রাসুল (ﷺ)-এর কথা অনুযায়ী 10 (দশ) জন সাহাবি সামনে এগিয়ে এলেন এবং সেই কুপের নিকট এগিয়ে গেলে, যখনি তারা কুপের কাছে পৌঁছে গেলো তখন কুপের ভেতর থেকে একটি বিকট আকারের শব্দ আসল এবং সেই সাথে একটি ভয়ানক জ্বীন সেই কুপের ভেতর হতে বেরিয়ে এলো। যাঁর ফলে পুরো জঙ্গলে আগুন জ্বলতে শুরু করলো এবং পুরো জমিন কাঁপতে শুরু করলো। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে সকল সাহাবি পিছু পা হয়ে সরে এলো কিন্তু সাহাবিদের মধ্যে থেকে আবুল আস (রাঃ) নামে একজন সাহাবি সাহস করে সেখানে এগিয়ে আসেন এবং একটু আগাতেই তাকে সেই শয়তান জ্বীন নিঃসঙ্গস ভাবে শহিদ করলো।

তৎক্ষনাৎ আসমান থেকে জিব্রাইল (আঃ) নেমে এসলেন এবং রাসুল (ﷺ)-কে বললেন, “হে নবি করিম (ﷺ) আপনি অন্য কাউকে পাঠানোর আগে এখানে হায়দারে কারার আসাদুল্লাহ্ আল্লাহর সিংহ এবং তাঁর জুলফিকার তরওয়ারকে পাঠিয়ে দিন।”

জিব্রাইল (আঃ)-এর কথা শুনে রাসুল (ﷺ) হযরত আলী (রাঃ)-কে সেখানে পাঠিয়ে দেন এবং আলী (রাঃ) যেন এই আদেশের জন্য দৃঢ় অপেক্ষায় ছিলেন, আদেশ পাওয়া মাত্রই আলী (রাঃ) তীব্র গতিতে সেই কুপের নিকট এগিয়ে যান এবং সেই শয়তান জ্বীনটি আবার বের হয়ে আসে এবং বলে, “কি-রে তোদের এক সাথীকে মেরে ফেলার পরেও তোদের কোনো শিক্ষা হয়নি, আবার মরতে চলে এসেছিস।”

তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন, “আমাকে চিনে রাখ আমি আলী ইবনে আবু তালিক, আমাকে তোদের কাবু করার জন্য এখানে পাঠানো হয়েছে, আর এটাই তোদের দুর্ভাগ্য।” হযরত আলী (রাঃ)-এর এই কথা শুনে সেই জ্বীন হযরত আলী (রাঃ)-কে মারার জন্য এগিয়ে আসে এবং হযরত আলী (রাঃ) তাকে তাঁর জুলিফার তরওয়ারে আঘাতে দুই টুকরো করে দেন। তারপরে একে-একে সকল জ্বীন কুপ থেকে বের হতে থাকে আর চারদিকে আগুন আরো জ্বলতে শুরু করে এবং জমিন কাঁপতে থাকে।

তারপর হযরত আলী (রাঃ) এই দৃশ্য দেখে পবিত্র কুরআন মাজিদ থেকে কিছু আয়াত পাঠ করতে শুরু করেন এবং আয়াতের পাঠ শুনে সহ্য করতে না পারে সকল জ্বীন আবার কুপের ভেতরে ঢুকে যায় আর আগুনগুলো নীভতে শুরু করে।
হযরত আলী (রাঃ) আবার পাত্রটি নিয়ে সেই কুপের ভেতরে ফেলে এবং আবার জ্বীনেরা সেই পাত্রটিকে কুপ থেকে বাহিরে ফেলে দেই, হযরত আলী (রাঃ) খুব রেগে গেলেন এবং পাত্রে থাকা রশিটি আবার ফেলে দেই কুপ ভেতরে এবং তিনিও পাত্রের সাথে সেই কুপে জুলফিকার তরওয়ার সহ ঢুকে যায়। ভেতরে ঢুকে হযরত আলী (রাঃ) দেখলেন যে, প্রায় এক হাজার ভয়ঙ্কর জ্বীন এবং তাঁদের বংশধরের লক্ষ-লক্ষ জ্বীনের সেখানে বসবাস। ইতিহাস বলে যে, সেখানে প্রায় আধা ঘন্টা যুদ্ধ হয়।

হযরত আলী (রাঃ) কুপে প্রবেশ করে একে-একে সকল জ্বীনকে তার জুলফিকার তরওয়ারের আঘাতে হত্যা করতে শুরু করে, আর এদিকে কুপের বাহিরে নবি করিম (ﷺ) ও সকল সাহাবিগণ খুবই চিন্তিত যে হযরত আলী (রাঃ) এর কোনো সারা শব্দ সেখান থেকে আসতেছিল না, তাঁরা সকলে ভাবলো যে হয়তো হযরত আলী (রাঃ) সেখানে জ্বীনেদের আক্রমণে মারা গেছেন। কিন্তু প্রায় আধা ঘন্টা পরে কুপের বাহির থেকে সকলে শুনতে পেলো যে, জ্বীনের ক্ষমা প্রার্থনা চাচ্ছেন হযরত আলী (রাঃ) এর নিকট।

ইতিহাস বলে সেই যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ) সেখানে 20,000 (বিশ হাজার) জ্বীনেদের তার জুলফিকার তরওয়ারের সাহায্য হত্যা করে।

জ্বীনেরা না পেরে হযরত আলী (রাঃ) এর নিকট একজন জ্বীন ক্ষমা প্রার্থনা চাই এবং বলে যে, “হে আল্লাহর সিংহ আমরা ক্ষমা প্রার্থনা চাচ্ছি এবং আমরা সকলে ইসলাম গ্রহণ করতে চাই।” কুপের বাহির থেকে সকলে শুনতে পাই যে, সকল জ্বীনেরা হযরত আলী (রাঃ) এর নিকট থেকে কালিমা পাঠ করছে-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”, বলে সকলে ইসলাম গ্রহণ করে এবং সেখানে জ্বীনেদের মাঝে থেকে একজন’কে তাদের দল নেতা নির্বাচন করেন এবং ইসলাম গ্রহণের পরে তার নাম দেওয়া হয় জাফর যইফ জীন, ইসলাম গ্রহণের আগে মানে ইসলামের বিরুদ্ধে যখন সেই জ্বীন ছিল তখন তার নাম ছিল কওগান যইফ।

ইতিহাস বলে যে, এই জাফর যইফ জ্বীন হযরত আলী (রাঃ) কে খুবই ভয় করতো এবং সে বলেছেন যে, হে আল্লাহর সিংহ আপনি যখনি বিপদে পড়বে আমাকে ডাক দিয়েন আমি আপনাকে সর্বদা সাহায্য করতে প্রস্তুত। এমনকি কারবালার ময়দানে যুদ্ধের কঠিন সময় যখন হযরত আলী (রাঃ) এর কলিজার টুকরা ইমাম হুসাইন শহিদ হওয়ার পথে তখন তাঁকে সাহায্য করতে যায় জাফর যইফ জ্বীন। সকল কাজ ছেড়ে তার কাছে যান সেই ইমাম হুসাইনের সকল সেনারা খুবই বিপদে পরে এবং শত্রুরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। জাফর যইফ জ্বীন সেই সময় ইমাম হুসাইনের নিকট এসে বলে যে, “হে ইমাম হুসাইন আপনি আমাকে অনুমতি প্রদান করুন আমি সকল শত্রু সেনাদের এক নিমিষে শেষ করে দিবো “ জাফরের নিকট এতটাই শক্তি ছিল যে-সে এক নিমিষে সকলকে ধুলোই মিশিয়ে দিতো। কিন্তু ইমাম হুসাইন তাঁকে বলে যে, “হে জাফর আমি এখানে আমার ছোট আজগর, গাজীকে সহ অনেক সঙ্গীদের হারিয়েছে, আজ আমার নানার খাতিরে আমাকে এখানে শহিদ হতে হবে।”


!! পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন “ইনশাআল্লাহ্” !!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url