দাউদ (আঃ)-এর রাজত্ব ও মোজেজা | দাউদ আঃ এর বিচার

প্রিয় পাঠক,
    আজকে আমরা জানবো হযরত দাউদ (আঃ) ঈদের দিন কিভাবে সকলে সামনে কিয়ামতের আলামত সরাসরি দৃশ্য দেখিয়েছিলেন। তবে চলুন ঘটনাটি জানা যাক এবং আজকের বিষয়টি থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা যাক।

দাউদ আঃ এর বিচার

দুনিয়ার বুকে একমাত্র হযরত দাউদ (আঃ) কিয়ামতের দৃশ্য দেখাতে পেরেছেন। 
বনি ইসরাইলে যারা-যারা এই দৃশ্য দেখেছেন তারা তারা এই দৃশ্য দেখার পরে কখনো আর পথ ভ্রষ্ট হয়নি।

ইতিহাস বলে একদিন প্রকাশ্যে ঈদগাহের ময়দানে হযরত দাউদ (আঃ) কিয়ামতের দৃশ্য সকলকে দেখান।

বনি ইসরাইলে যুগে কিছু মানুষ ছিল যারা হযরত দাউদ (আঃ)-কে কিভাবে হে করা যেতো সেই সুযোগে থাকতো, তাই তাঁরা একদিন হযরত দাউদ (আঃ) কে বলল, ‘হে দাউদ তুমি যদি সত্যি, সত্যবাদী হও তবে আমাদের কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে বল’, তাদের এই কথা শুনে হযরত দাউদ (আঃ) বলল, “ঠিক আছে কালকে ঠিক এইসময় তোমরা সকলে ঈদগাহের ময়দানে আসিও আমি তোমাদের সকলকে স্ব-চক্ষে দেখাবো।”

পরের দিন সকলে জমা হলো ঈদগাহের ময়দানে। 
তবে ঘটনায় যাওয়ার আগে আরেকটি বিষয় এখানে আনছি যা এই ঘটনার অন্তর্ভুক্ত।

বনি ইসরাইলে যুগে একজন ধনী ব্যক্তি ছিল, যাঁর ধন-সম্পদের অভার ছিল, আল্লাহ তাকে অঢেল সম্পদ দান করেছিল, কিন্তু সেই ব্যক্তির এই ধন-সম্পত্তির বাহিরে একটি গরু ছিল যা তাঁর কাছে নাকি তাঁর সম্পদের চেয়েও অনেক বেশি ছিল। সব-সময় গরুটিকে মনি-মুক্তা দিয়ে সাজিয়ে রাখতো। একদিন এমন হলো যে, গরুটি কোনোভাবে সেই ধনী ব্যক্তির বাড়ী হতে হারিয়ে গেল এবং হারানোর খবর পেয়ে ধনী ব্যক্তি পাগল পাড়া হয়ে গেল। সে ঘোষণা দিল, ‘যে গরুটিকে ও গরুটির চোরকে ধরে এনে দিতে পারবে তাকে গরুর ওজনের সমপরিমাণ মুদ্রা দেওয়া হবে।’

তাঁর এই ঘোষণা সকলের কানে পৌঁছাল এবং সকলে খোঁজাখোঁজি শুরু করলো আর এদিকে গরুটি একটি গরিব ঘরে মহিলার বাড়ীর কাছে এসে হাজির হলো যার একটি ছোট ছেলে সন্তানও ছিল। জীর্ন-সিন্ন সেই মহিলাটি দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এক নির্জন গ্রামে থাকতো তাঁর ছেলেকে নিয়ে, সেখানে তিনি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতো এবং তিনি খুবই আল্লাহ ভীরু ছিল। তাঁদের সেখানে কোনো ঘর ছিলনা তাঁরা সেখানে একটি তাবু টাঙ্গিয়ে রাত যাপন করতো এবং তাঁদের দিনকাল অনেক কষ্টে যাপন হতো। আল্লাহ অশেষ রহমতে তাঁদের তাবুর পাশে একটি আনার গাছ মানে ডালিমের গাছ জন্ম নেই এবং সেটিতে প্রতিদিন দুটি করে আনার ধরতো যা মা ও ছেলে খেয়ে রাত্রি যাপন করতো। কিন্তু হঠাৎ করে যখন সেই গরুটি তাঁদের তাবুর পাশে এসে কিছুদিন ধরে দাড়িয়ে আছে সেদিন থেকে আনার গাছে আর আনার ধরে না আর তাঁরা কিছু খাইতেও পারে না এভাবে কিছুদিন চলে যায় এবং সেই বৃদ্ধা মহিলার ছেলেটি বলে মা এই গরুটি কার, যবে থেকে এই গরুটি আমাদের এখানে এসেছে তবে থেকে আল্লাহর তরফ থেকে গাছে আনার ধরাও বন্ধ হয়ে গেছে। মহিলাটি কোনো উপায় না পেয়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করতে শুরু করে এবং সেই গরুটি নিজে বলছিল যে, হে আল্লাহর বান্দা ও বান্দী তোমরা আমাকে জবাই করো এবং তোমাদের খুদা নিবারণ করো। কিন্তু বৃদ্ধা মহিলা কোনোভাবে তা বুঝতে পারছেন না, তিনি বললেন যে, আমরা জানি না এই গরুটি এখানে কেন এসেছে এবং তাঁকে যদি জবাই করে খাই তবে এটি হারাম হতে পারে যাঁর ফলে আল্লাহ নারাজ হতে পারে। কিন্তু বৃদ্ধার ছেলেটি ঠিকি বুঝতে পেরেছিলেন যে গরুটি আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে এবং তিনি এটিকে জবাই করে খাওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। ছেলেটি তার মাকে বলল যে, মা দেখো যবে থেকে গরুটি আমাদের এখানে এসেছে তবে থেকে গাছে ফল আসা বন্ধ হয়ে পড়েছে এবং গরুটি নিজেও বলছে যে আমাকে জবাই করো। অতঃপর ছেলেটি তার মাকে শেষমেষে বুঝাতে সক্ষম হয় এবং তাঁরা গরুটিকে জবাই করে গোশত খান এবং এর কিছু অংশ তারা পরবর্তীতে খাওয়ার জন্য আলাদা ভাবে রেখে দেন এবং অন্যকে দিবে বলেও রেখে দেন।

আর এদিকে সেই ধনী ব্যক্তির সহচরী গরুর খোঁজে সেই বৃদ্ধার বাড়ীতে হাজির, সে দেখল যে গরুর গোশত বৃদ্ধা এবং সেই ছেলেটি মিলে খাচ্ছেন এবং অপরদিকে গরুর মাথাটি পড়ে আছে। সহচরী দেখে নিজে কিছু গোশত আত্মশাধ করতে চাইলেন এবং বৃদ্ধাকে বললেন, আমাকে কিছু গোশত দিবেন আমি খুবই খুদার্থ। বৃদ্ধা তাঁকে কিছু গোশত দিলো এবং সেই সহচরী বললো আমাকে গরুর মাথাটি দিন ওটা আমি নিয়ে যায়, সহচরী গোশত ও গরুর মাথাটি প্রমাণ স্বরূপ সেই ধনী ব্যক্তিটির নিকট নিয়ে যায়। ধনী ব্যক্তি এই দৃশ্য দেখে খুব রাগান্বিত হলেন।ঠিক সেই দিন ঈদের দিনে ঈদগাহের ময়দানে এই বিষয়টি অভিযোগ আকারে ধনী লোকটি হযরত দাউদ (আঃ) এর নিকট নিয়ে যান এবং হযরত দাউদ (আঃ) বলেন সেই মহিলাকে এখানে আনা হোক। হযরত দাউদ (আঃ) এর সৈন্য দল সঠিক প্রমাণ পেয়ে সেই বৃদ্ধা নারী ও ছোট ছেলেটিকে গ্রেফতার করে আনলো এবং হযরত দাউদ (আঃ) বৃদ্ধা নারীকে বলল, “হে বৃদ্ধা নারী তুমি কেন অন্যের গরুকে জবাই করে ভক্ষন করেছো?” বৃদ্ধা মহিলা তখন সব ঘটনা খুলে বলল, সে বলল যে, “আল্লাহর নবি হযরত দাউদ (আঃ) আমি দীর্ষ ৬০ বছর ধরে নদীর পাড়ে তাবু টাঙ্গিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল ছিলাম, হঠাৎ একদিন দেখি একটি গরু আমার তাবুর পাশে এসে দাঁড়ি আছে এবং আমার সেখান থেকে কোথাও যাচ্ছেনা, আর এদিকে আমার তাবুর পাশে থাকা আনার গাছটিতেও ফল হচ্ছিল না। গরুটি নিজে বলেছিল যে আমাকে জবাই করো এবং আমাকে ভক্ষণ করো আমাকে আল্লাহর তরফ হতে পাঠানো হয়েছে, তাই খুদার জ্বালা সইতে না পেরে আমি গরুটিকে জবাই করি এবং ভক্ষণ করি। সেই সাথে সেই সহচরীর কথাটিও বলে এবং বলে যে হে নবি দাউদ (আঃ) আমি একজন ধনী ব্যবসায়ির স্ত্রী ছিলাম, একদিন আমার স্বামী ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় রাওনা দেন এবং সেখানে তাকে কিছু অসৎ ব্যক্তি হত্যা করে মেরে ফেলন ও জোর পূর্বক আমাদের সকল সম্পত্তি ছিনিয়ে নেন।” বৃদ্ধা মহিলাটির সকল কথা শুনার পরে নবি দাউদ (আঃ) সেই ধনী ব্যক্তিটিকে বললেন, “আমি বৃদ্ধা মহিলার তরফ হতে তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তোমার যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা আমি পূরণ করে দিবো।” হযরত দাউদ (আঃ)-এর এই কথা শুনে, ধনী ব্যক্তিটি বলল, ‘দেখো হে বনি ইসরাইলের লোকজনেরা তোমাদের বাদশা কি বলে শুনো, অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য সে নিজেই সাহায্য করছে।’ তাঁর  এই কথা শুনে উপস্থিত সকলে নবি দাউদ (আঃ) কে দোষারোপ করতে শুরু করল এবং তাদের এমন কথাতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠল এবং আল্লাহর তরফ হতে জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে নবি দাউদ (আঃ) এর কাছে বার্তা প্রেরণ করা হলো, জিব্রাইল (আঃ) নবি দাউদ (আঃ) এর নিকটে এসে তাকে বলল যে, “হে আল্লাহর নবি হযরত দাউদ (আঃ) তুমি সেই ধনী ব্যক্তিটিকে প্রশ্ন করো যে, সে যে গুরুটিকে নিজের বলে দাবি করছে সেটি কি আসলে তার?” সেখানে উপস্থিত সকলে কেউ জিব্রাইল (আঃ)-কে দেখতে পাচ্ছেননা, কারণ আমরা জানি যে নবিরা ব্যতিত আর কোনো সাধারণ মানুষ জিব্রাইল (আঃ) কে দেখার ক্ষমতা নেই। আল্লাহর নিকট হতে এই প্রশ্নটি হযরত দাউদ (আঃ) সেই ধনী ব্যক্তিটিকে করে এবং ধনী ব্যক্তিটি আরও জোর গলায় বলতে শুরু করে যে, হে দাউদ তুমি কি আমার উপর সন্দেহ করছো? এখানে উপস্থিত সকলে জানে যে সেই গরুটি প্রায় ৬০ বছর ধরে আমার নিকটে রয়েছে। তাঁর এই উত্তরে কারণে আল্লাহর তরফ হতে আরও একটি প্রশ্ন আসে যে, তুমি কি সত্যি প্রকৃত পক্ষে সেই গরুরটির মালিক না অন্য কেউ? সেই ধনী ব্যক্তিটি আবারও একই কথা বলে এবং আল্লাহর তরফ হতে প্রশ্ন আসা মাত্রই জিব্রাইল (আঃ) যেমনটি বলছেন ঠিক তেমনি নবি দাউদ (আঃ) বলে যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে নবি দাউদ (আঃ) বললেন যে, “হে ধনী ব্যক্তি তুমি মিথ্যা কথা বলছো, তোমার মুখ মিথ্যা কথা বলছে, মহান আল্লাহর নিকট থেকে এখন তোমার মুখ বন্ধ করে দিয়ে তোমার হাত ও তোমার পা কে কথা বলার জন্য বলছি।” হযরত দাউদ (আঃ)-এর কথা অনুযায়ী ব্যক্তিটির মুখ বন্ধ হয়ে গেল এবং তাঁর হাত কথা বলতে শুরু করলো। এমন দৃশ্য দেখে উপস্থিত সকলে চমকে গেলো এবং সকলে চুপ হয়ে গেল। হযরত দাউদ (আঃ) হাতকে প্রশ্ন করা শুরু করলো এবং বলল, ‘হে হাত তুমি সঠিক কথা আমাদের বলো সেদিন কি হয়েছিল?’ হাত বলতে শুরু করলো, “হে আল্লাহর নবি দাউদ (আঃ) সেদিন সেই বৃদ্ধা মহিলার স্বামীর সাথে এই ধনী ব্যক্তিটি ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে যায়। আসলে সেই ধনী ব্যক্তিটি হচ্ছে বৃদ্ধা মহিলার স্বামীটির খুবই কাছের একজন সহযোগী। সেদিন তার সাথে রওনার দেওয়ার পরে একটি নির্জন স্থানে এই লোভী লোকটি বৃদ্ধার স্বামীকে ছুরির আঘাতে হত্যা করে এবং পা বলতে শুরু করে যে, হে নবি দাউদ (আঃ) এই পা দিয়ে হেঁটে এই খারাপ লোকটি তাঁকে মেরে ফেলেন এবং তার সাথে থাকা সকল সম্পত্তি হাতিয়ে নেন এবং তার নিকটে একটি ছোট গরুর বাছুর ছিল যা সে নিজের বলে এখন দাবি করছে কিন্তু আসলে সেটি ধনী ব্যক্তিটির নয় বরং এই বৃদ্ধা মহিলা ও সেই ছোট ছেলেটির হয়।” পরে সেই ধনী ব্যক্তিটিকে তাঁর অপরাধে সঠিক শাস্তি প্রদান করা হয় এবং সেখানে থাকা সকলে এই ঘটনাটি দেখে অবাক হয়ে যান এবং সকলে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং কোনোদিনও পথভ্রষ্ট হননি।

আমরা এতে বুঝতে পারি যে, কিয়ামতে দিন আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমাদের কৃর্ত-কর্মের স্বাক্ষী দিবে। আমি কি কাজ করেছি আর কি করেনি।

এই হলো দুনিয়ার বুকে প্রথম কিয়ামতের দৃশ্য যা আল্লাহর নবি হযরত দাউদ (আঃ) দেখিয়েছেন বনি ইসরাইলে যুগে আর যা দেখে সেই সময়কার কোনো মানুষ কখনো পথভ্রষ্ট হননি।

!! মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরে’কে সঠিকভাবে বুঝাও ও সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুক !!
!! "আমিন" !!

!! পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন “ইনশাআল্লাহ্” !!

!! “সমাপ্ত” !!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url