মদিনায় কুরআন শরিফের কারিশমা দেখলো গোটা পৃথিবী

আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে মদিনাবাসী ও পুরো বিশ্ব পবিত্র কুরআন শরিফের কারিশমা দেখলো। চলুন তবে জানা যাক কি ঘটেছিল সেদিন:-

মদিনায় কুরআন শরিফের কারিশমা দেখলো গোটা পৃথিবী
হযরত উসমান গনি (রাঃ) এর খেলাফতের সময় চলছিল সে সময় মদিনাতে। হযরত উসমান (রাঃ) একদিন তাঁর ঘরে বসেছিল, সে সময় এক লোক তাঁর কাছে এসে বলছিল যে, হে উসমান (রাঃ) আমার বিবাহের ছয় মাস পার হয়েছে, কিন্তু এই ছয় মাসের ভেতরে আমার স্ত্রী এক সন্তান প্রসব করেছে। সে সময় একটি কথা প্রচলন ছিল যে, ছয় মাসের আগে কোনো সন্তান জন্ম নেন না। সেই জন্য সে ব্যক্তি খুবই পেরেশান হয়ে গেছিল।

সেই ব্যক্তি কোনো কিছু চিন্তা না করেই আমিরুল মুমিনির এর নিকট এই বিষয় নিয়ে যান এবং তাঁর কাছে নালিশ করে। হযরত উসমান (রাঃ) এই বিষয়টি শুনে তাঁর মজলিসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে মাসোয়ারা শুরু করলেন এবং বাচ্চাটি হালাল নাকি হারাম সে বিষয় আলোচনা করতে শুরু করলেন যেহেতু ইতিপূর্বে ছয় মাসের আগে বাচ্চা জন্মগ্রহণ এই রকম ঘটনা আগে ঘটেনি সেহেতু বাচ্চাটিকে হালাল বলে বৈধতা দিতে পারে না। তাই সেখানে উপস্থিত সকলের সাথে মাসোয়ারা করার পরে এই সিদ্ধান্তের উপর উপনীত হইলো যে, এই বাচ্চাটি কখনো উক্ত পুরুষের হতে পারে না তাই বাচ্চাটি হালাল নয় বরং হারাম। সকলে ও হযরত উসমান (রাঃ) সিদ্ধান্ত নিলেন যে, সেই লোকটি স্ত্রী মানে বাচ্চাটির মাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক। তাই সেই মহিলাটিকে একটি খোলা মাঠে নিয়ে গিয়ে রজমের শাস্তি প্রদান করার প্রস্তুতি নেওয়া হলো। আর এই কথাটি পুরো মদিনায় ছড়িয়ে পড়লো এবং হযরত আলী (রাঃ) এর কানে এই কথাটি পৌঁছালো। 

তারপর হযরত আলী (রাঃ) ময়দানে না গিয়ে সোজা হযরত উসমান (রাঃ) এর নিকট গেলে এবং তাঁকে বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন হযরত উসমান (রাঃ) আপনি কি সেই মহিলাকে হত্যা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জিনার অভিযোগে? তখন হযরত উসমান (রাঃ) বললেন-হ্যাঁ, কেননা কখনো ছয় মাসের মধ্যে কোনো বাচ্চা জন্মগ্রহণ করতে পারেই না, আর এটি আমি উপস্থিত সকলে সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে নিয়েছি কারণ বাচ্চাটি তো হারাম ছয় মাসের মধ্যে কখনো বাচ্চা জন্ম হতে পারেই না।

তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন আপনি বিশাল বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁর এই কথা শুনে হযরত উসমান (রাঃ) ভ্রু মুচরিয়ে বললেন, আমি সব হিসাব নিকাশ করে সকলের সামনে সকলের সাথে মাসোয়ারা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এটি কখনো হতেই পারেননা যে একটি বাচ্চা ছয় মাসে জন্মগ্রহণ করে।

তারপর হযরত আলী (রাঃ) বললেন যে, হে উসমান ছয় মাসের বাচ্চাকে তো কুরআনে বলা হয়েছে, তাঁর এ কথা শুনে হযরত উসমান (রাঃ) খুব বিচলিত হয়ে ঘামতে শুরু করলেন এবং বলতে লাগলেন, কি বলো তুমি কি সত্যি বলছো? কুরআনে এটি বলা হয়েছে, তুমি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলো তো। হযরত আলী (রাঃ) বললেন, কুরআন খুলে পড়ুন, আর পড়ে দেখুন গর্ভবর্তী থেকে দুধ পান করার কতটুকু সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ত্রিশ মাস? হযরত উসমান (রাঃ) বললেন হ্যাঁ ত্রিশ মাস, তবে এর ধারা কিভাবে ছয় মাসের বাচ্চা হালাল প্রমাণিত হয়।

তারপর হযরত আলী (রাঃ) বললেন, এটি অংকের মাধ্যমে প্রমান হালাল হয়। কারণ আপনি দ্বিতীয় আয়াত পড়েননি, সেখানে দুই বছর দুধ পান করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে আপনি ত্রিশ মাস থেকে দুই বছর বের করে নিন। এরপর যখন আপনি ২৪ মাস বা দুই বছর বের করে নিবেন আর পিছনে শুধু ছয় মাস বেঁচে থাকবে। হযরত উসমান (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ কথা তো তুমি ঠিক বলেছ। হযরত আলী (রাঃ) বললেন, যখন মায়ের পেট থেকে সন্তান ভূমিষ্ট হবে তখনি সেই বাচ্চা হালাল ভাবে ধরা হবে, হারাম নয় কারণ বাচ্চা জন্মগ্রহণের দুই বছর দুধ পান না করা পর্যন্ত কোনো বিষয় মাসালা বা ফয়সালা কোনো মানুষ নিতে পারবে না আর কুরআনে বলা হয়েছে, একটি বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর হতে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করা বাধ্যতামূলক। আর এটি কুরআনের আয়াত। এই কথা শুনে হযরত উসমান (রাঃ) বললেন, হে আলী তুমি আমার অনেক বড় গুনাহ্ হতে বাঁচিয়ে নিলে। তারপর হযরত উসমান (রাঃ) দৌড়াতে শুরু করলেন এবং তাঁর পিছনে হযরত আলী (রাঃ) দৌড়াতে শুরু করলেন সেই ময়দানে যাওয়ার জন্য। আর হযরত উসমান (রাঃ) আল্লার নিকট কাঁদতে কাঁদতে দোয়া করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, আজ আমার জন্য একজন বে-গুনাহ্ নারীর জীবন চলে যাচ্ছিল হে আল্লাহ কিয়ামতের দিনে আমি হযরত উসমান তোমার নিকট কিভাবে মুখ তুলে দাঁড়াবো।

তারপর হযরত উসমান (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) দু’জনে সে ময়দানে পৌঁছালো এবং সেখানে তাঁরা দেখলো যে সেই মহিলাটিকে গর্ত করে গলা অব্দি ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে এবং তাঁকে সেই শাস্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তারপর হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর সিপাহিদের আদেশ দিলেন যে, তাঁকে মাটি থেকে তুলে আনো। তখন সিপাহিরা তাঁকে সম্মানের সহিত সেখান থেকে তুলে আনলেন এবং হযরত উসমান (রাঃ) সেই নারীটিকে ডেকে তাঁকে বললেন যে, আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি না জেনে একটি বিশাল বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম।

তারপর হযরত উসমান (রাঃ) বাচ্চাটিকে নিজের কোলে তুলে নিলেন এবং সেই ব্যক্তিটিকে ডেকে বললেন যে, দেখো তো এই বাচ্চাটি ঠিক তোমারি মতো দেখতে, কিন্তু তুমি তাকে না দেখে নিজের পুত্র সন্তান বলে মেনে নিচ্ছো না। তারপর সেই ব্যক্তি প্রথমবারের মতো সেই বাচ্চাটির দিকে তাকালেন এবং বলতে লাগলেন, আরে হ্যাঁ তো এই বাচ্চাটি তো সত্যি আমার মতো দেখতে, এ তো আমারি বাচ্চা।

সর্বশেষে সেই ব্যক্তি ও হযরত উসমান (রাঃ) সেই মহিলাটির নিকট ক্ষমা চাইলেন এবং উপস্থিত সকলে মিলে হযরত আলী (রাঃ) এর জ্ঞানের তীক্ষ্ণতা দিকে তাকিয়ে তাঁর জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা চাইলেন।

!! পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন “ইনশাআল্লাহ্” !!
“সমাপ্ত”
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url