ওহী নাযিলের পদ্ধতি ও ওহী নাযিলের পদ্ধতি কয়টি

প্রিয় পাঠক,

আজকে আমরা জানবো আমাদের প্রিয় নবি ও মহান আল্লাহ্ তায়ালা প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর কিভাবে ওহী নাযিল হয়েছি বা তাঁর উপর ওহী নাযিলের পদ্ধতিটি কেমন ছিল। 

ওহী নাযিলের পদ্ধতি

ওহীর সূচনা (জিবরাইলের সাথে সাক্ষাৎ)

    ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি হেরা’র গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন।

তারপর খাদীজা (রাঃ)-এর কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, পড়ুন’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “আমি বললাম, আমি পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন’। আমি বললামঃ আমি তো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, আমিতো পড়িনা’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত।” (৯৬: ১-৩)

তারপর এ আয়াত নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিন্‌ত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দাও। ’ তাঁরা তাঁকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হল (বুখারীর ৩ নং হাদীসের অংশ)। এরপর কিছু সময় ওহী বিরতি থাকে।

অপর হাদীসে রয়েছে-
ইবনু শিহাব (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) ওহী স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ একদা আমি হেঁটে চলেছি, হঠাৎ আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম। দেখলাম, সেই ফিরিশতা, যিনি হেরায় আমার কাছে এসেছিলেন, আসমান ও যমিনের মাঝখানে একটি কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তৎক্ষণাৎ আমি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তারপর আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন, হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্কবানী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন। অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন (৭৪: ১-৪)। এরপর ব্যাপকভাবে পর পর ওহী নাযিল হতে লাগল। (বুখারী, ৪, ৩২৩৮)

রাসুল (সা:) জিবারাঈল (আ:) কে মোট ২ বার দেখেছিলেন।

কুরআনে বর্নিত –
  • কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।
  • তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা,
  • সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল। ৭. উর্ধ্ব দিগন্তে
  • অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল।
  • তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।
  • তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।
  • রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে।
(সুরা আন নাজম)

আয়াতের ব্যাখায়-
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি।
তিনি উত্তরে বলেছেন, আয়াতে যাকে দেখার কথা বলা হয়েছে, সে জিবরীল আলাইহিস সালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে মাত্র দু’বার আসল আকৃতিতে দেখেছেন। আয়াতে বর্ণিত দেখার অর্থ এই যে, তিনি জিবরীলকে আকাশ থেকে ভূমির দিকে অবতরণ করতে দেখেছেন। তার দেহাকৃতি আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী শূন্যমণ্ডলকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল। [বুখারী: ৪৬১২, ৪৮৫৫, মুসলিম: ১৭৭/২৮৭, ২৮৮, ২৮৯, তিরমিযী: ৩০৬৮, মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৪১]

অথচ ভারত উপমহাদেশে বহু ওয়াজে এটাকে ভুল ব্যাখা করে বলে- রসুল (সা:) আল্লাহকে দুবার দেখেছেন।

আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত” (৬ঃ ১০৩)
এরুপ তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দুত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাময়” (৪২ঃ ৫১)।

আয়িশা (রাঃ) বলেন, আর ঐ ব্যাক্তিও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়, যে এমন কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোন কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ হে রাসুল! আপনার প্রতিপালকের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার রুকন, যদি তা না করেন তবে আপনি তার বার্তা প্রচারই করলেন না। (৫ঃ ৬৭)

তিনি (আয়িশা (রাঃ) আরো বলেন, যে ব্যাক্তি এ কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহী ব্যতীত কাল কি হবে তা অবহিত করতে পারেন, সেও আল্লাহর উপর ভীষন অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “বল, আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না।(২৭:৬৫)

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ মাসরূক (রহঃ) পুনঃনিরীক্ষণঃ সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)(কিতাবুল ঈমান)

লাইলাতুল মেরাজ বিশ্বাস ঈমানের অংশ তবে আল্লাহ যতটুকু জানিয়েছে কুরআন, সুন্নাহ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত – অনুমানের উপর নির্ভর করে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।

ইনশাআল্লাহ আমরা জান্নাতে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url