প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে - মানুষ মরণশীল

প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে

দুনিয়াতে আমরা কেউ চিরস্থায়ী বেঁচে থাকবো না। আমাদের সকলকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, কেউ মানুক আর না মানুক। আপনি যদি প্রকৃত পক্ষে একজন মুসলিম ও ইমানদার ব্যাক্তি হন তবে আপনাকে অবশ্যই এটি মানতে হবে “আপনাকে একদিন ঠিক মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”। আপনার মৃত্যুর সময় আপনি যেখানেই লুকিয়ে থাকুন না কেন, যতই সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করুন না কেন আপনার রুহ্’টা সঠিক সময় উড়ে যাবে সেই বিশাল আকাশের দিকে। মৃত্যু আপনার সামনে কখন এসে দাঁড়াবে তা আপনি কোনোভাবেই বুঝতে পারবেন না। তবে আপনি যদি ইমানদার ব্যাক্তি হন তবে মহান সৃষ্টিকর্তা অশেষ রহমতে আপনি মৃত্যুর কিছুদিন আগে অনুভব করতে পারবেন যে ‘আপনার মৃত্যু অতি শীঘ্রই হবে’।


ঠিক একদিন গুঁটি কয়েক মানুষ নিয়ে হবে আমাদের জানাযা। পৃথিবীর সকল কিছু ত্যাগ করে চলে যাবো সবার থেকে অনেক দূরে। যেখানে কেউ আমাদের কোনো খোঁজ-খবর নিতে পারবেনা। আমরা কিভাবে থাকবো সেখানে তা কেউ জানবেনা, শুধু আপনি আর এক আল্লাহ্ ছাড়া

রুহ্’টা যখন শরীর থেকে বের করে নেওয়া হবে তখন আপনার নিথর দেহটা পড়ে রবে। সকলে জানতে পারবে আপনি আর এই দুনিয়াতে নেই। আপনার দুনিয়াবি জীবনের শেষ কার্য্য সম্পাদন করা হবে। প্রথমত আপনার মৃত্যুর খবরটি চলে যাবে আপনার পরিবারের নিকট, আপনার পারা-প্রতিবেশী, আপনার চেনা-পরিচিত প্রিয়জন ও অনেক চেনা মুখগুলো আপনাকে শেষ দেখা দেখতে আসবে এবং পরবর্তীতে আপনার দেখা পাবে তাঁরা কিয়ামতের মাঠে। 

আপনার জীবনটি কিন্তু খুবই ছোট। আপনার কাছে মনে হতে পারে 70-80 বা তারও বেশি সময় যদি বেঁচে থাকেন তবে আপনার কাছে বা যেকোনো সাধারণ মানুষের কাছে মনে হতে পারে আপনি এই দুনিয়াতে অনেক সময় বেঁচে ছিলেন। তবে বিশ্বাস করুন আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আপনি আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে যখন আপনার শেষ সময় এসে মনে করবেন তখন আপনার ধারণা একটিই হবে ‘এতদ্রুত সময়গুলো কিভাবে পেড়িয়ে গেল, চোখের পলকে সময়গুলো পাড় হয়ে গেল’। মূলত আমাদের জীবনটি এমনটি বয়সগুলো আমাদের ভাগ করা থাকে। যেমন ধরুন: আপনার নিজের জন্য, আপনার পরিবারের জন্য, আপনার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য এবং শেষমেষ কিছু সময় আপনার নাতী-নাত্নীর জন্য।  

আপনি মারা গেছেন, আপনাকে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক শেষ দাফন কার্য সম্পাদন করা হবে। আপনাকে শেষবারের মতো গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। আর এদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা পাশে আপনাকে যেখানে রাখে আসা হবে সেই সাড়ে তিন হাত ঘরটিও প্রস্তুত করা হবে। আপনাকে গরম পানি ও বোরই পাতার দিয়ে শেষ গোসল করিয়ে দেওয়া হবে, বাজার থেকে আপনার কাফনের কাপড় আনা হবে, গোসল শেষে আপনাকে সেই সাদা কাফনের কাপড়টি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে যা আপনার এই দুনিয়াতে শেষ পরিহিত কাপড়। তারপর আপনাকে রাখা হবে মসজিদের সেই খাঁটটিতে যা হবে আপনার শেষ ঠিকানার বাহন। মসজিদের এলান হবে আপনার জানাজার নামাজের সময়, চেনা-পরিচিত সকলে আপনার জানাজায় উপস্থিত হবে। আপনি খেয়াল করুন তো দেখি- আল্লাহ্ যখন আপনাকে পৃথিবীতে প্রথম ভূমিষ্ট করেছিলেন তখন আপনার কানে সেই সু-মধুর আযান দেওয়া হয়েছিল এবং আপনি যখন মারা গেলেন আপনার লাশটিকে সামনে রেখে সকলে 2 রাকার নামাজ আদায় করলে কিন্তু কোনো আযান দেওয়া হয়নি কেন? এই তো জীবন “শুরুতে আযান আর শেষে নামাজ”। আপনার রুহ্’টা শেষ নামাজ দেখতে পায় মৃত্যুর পরে যা আযান ছাড়া আদায় করা হচ্ছে। নামাজ শেষে আপনার দেহটাকে সেই সাড়ে তিন হাত ঘরটির ভেতরে রাখা হবে যা আপনার এই দুনিয়াতে শেষ বিছানার ও শেষ ঘর। 

দুনিয়ার জীবনটি যেমন ছোট এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে তা শেষ হয়ে যায় ঠিক একইভাবে আপনার মৃত্যুর পর আপনার শরীরটাকেও মাটির নিচে রেখে দেওয়া হয় আপনার পরিবারের থেকে অনেক দূরে রেখে আসা হয়। যেমন ধরুন: আপনি মারা গেলেন যোহরে সময় এবং আপনার দাফন কার্য শেষ করা হলো মাগরিবের সময় অর্থাৎ 7 ঘন্টার ভেতরে আপনাকে রেখে আসা হলো সেই নির্জন একটি জায়গাতে, যেখানে আপনার খোজঁ নেওয়ার মতো কেউ নেই, সেখানে আপনি লক্ষ-লক্ষ শাহীতদের মাঝে রয়েছেন। মূলত এটি জীবন। আপনাকে আপনার প্রিয়জনেরাই কবরে শাহীত করে আসবে, দেখবেন কয়েকদিন তাঁরা হয়তো আপনার কবরের পাশে এসে দোয়া করবে কিন্তু বেশি সময় নিবেনা একমাস বা তারও কিছুদিন বেশি দিনের পরে  তাঁরা কেউ আর আপনার কবরের কাছে আসবে না। ধীরে ধীরে তাঁরা সকলে আপনাকে ভুলে যাবে। ভুলে যাবে যে আপনি তাঁদের মাঝে ছিলেন। এখন একটু মন দিয়ে ভাবুন তো, ‘আপনি আর বেঁচে নেই, আপনি  যে এই দুনিয়াতে এতকিছু করে গেছেন যেমন: বাড়ী, গাড়ী, ধন-সম্পদ, আপনার বিশাল বিশাল জায়গা-জমি, অফিস ইত্যাদি এগুলো কি আপনার কবরের আপনাকে দেওয়া হয়েছে? আপনি কি এগুলো আপনার সাথে নিয়ে গেছেন? নাকি আপনার প্রিয়জনেরা আপনার কবরের পাশে এগুলো স্ব-যত্নে রেখে গেছে’? এগুলোর কিন্তু কোনোটি নই। আপনি মারা গেলে আপনার ধন-সম্পদ কোনো কিছুই আপনি আপনার কবরে নিয়ে যেতে পারবেননা বরং এগুলো পড়েও থাকবেনা, এগুলো ভোগ করবে আপনার ওয়ারিশগণেরা যাকে আপনি এই দুনিয়াতে ফেলে রেখে এসেছেন। ভাবুন তো- এতকিছু করলেন দুনিয়াতে কোনো কিছুই আপনি আর পাইলেন না, ভালো লাগবে আপনার তখন? আপনাকে কবরে শাহীত করে আপনার প্রিয়জনেরা যখন চল্লিশ কদম পেরিয়ে আসবে তখন আপনার হিসাব শুরু হবে, এক সেকেন্ড দেরিতেও নয় আবার এক সেকেন্ড আগেও নয়, সময় মতো আপনার কবরে হিসাব শুরু হয়ে যাবে এবং আপনাকে সেখানে কেউ সাহায্য করতেও আসবেনা। আপনার জীবনের মূল অংশ হচ্ছে সেই কবর এবং সেখান থেকে শুরু আপনার পরবর্তী সময়কাল যা আখিরাত।

আপনি যদি এই দুনিয়াতে ভালো আমল-আখলাক নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তবে আপনার আখিরাত হবে অত্যান্ত সুন্দর ও যা আপনি কখনো ভেবেও দেখেনি। আপনাকে প্রেরণ করা হবে- ‘ইল্লিয়্যিন’, “ইল্লিয়্যিন অর্থ জান্নাত, অথবা সপ্তম আকাশে আরশের নিচে অবস্থিত একটি স্থান”। আর যদি আপনি এই দুনিয়াতে সবসময় মন্দ কাজ, সবসময় মিথ্যা, অন্যায়, অত্যাচার, বে-ভিচার, নির্যাতন ইত্যাদি করে আসেন তবে আপনার জন্য রয়েছে খুবই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যা আপনাকে প্রদান করা হলে আপনি তা কখনো সহ্য করতে পারবেনা। আপনাকে প্রেরণ করা হবে “সিজ্জিন ( আরবি: سِجِّين) যা জাহান্নামের তলদেশের কারাগার, ভয়াবহ যন্ত্রণা বা সঙ্কুচিত স্থান”। এখন আপনি ভাবুন আপনি কোথায় যেতে চান।  
আর মনে রাখুন, এই দুনিয়া মূলত একজন মুমিন ব্যাক্তির জন্য পরীক্ষার কেন্দ্র, যেখানে তাঁকে পদে-পদে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা পরীক্ষায় ফেলেন এবং সেই মুমিন ব্যাক্তি প্রতিটি পদক্ষেপ ভেবে-চিন্তে পা ফেলে এবং আল্লাহ্ সেই মুমিন ব্যাক্তির সাথেই থাকেন। একটি প্রকৃত মুমিন ব্যাক্তি আল্লাহ্ প্রকৃত বন্ধু স্বরূপ।

-- ভেবে দেখুন তো --

আপনি মারা গেছেন 
আপনার জানাজার নামাজ শেষ। 
কবরে রাখা হলো। 
আপনি অপেক্ষা করতেছেন...
মুনকার-নাকির ফেরেশতার জন্য। 
কিন্তু, তাঁরা আসছে না, কেনো?
অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া শুরু করেছেন আপনি। 
একটু পরেই কবরের সাথে 
জান্নাতের একটি সুড়ঙ্গপথ তৈরি হয়ে গেলো। 
ওমা, এ কেমন কথা! প্রশ্ন উত্তর কই?
তখন আপনার মনে পড়লো- 
'প্রতি রাতে সূরা মূলক পাঠ করলে 
কবরে প্রশ্ন উত্তরের ঝামেলা নাই। 
কবর আজাবেরও কোনো চান্স নাই।' 
অতঃপর, রেশমী চাদরের নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আপনি বললেন 
'আলহামদুলিল্লাহ'। 
(তিরমিজি:- ২৮৯০-২৮৯২)


এইতো জীবন,
শুরুতে আজান 
আর, 
শেষ নামাজ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url