হযরত আলী রাঃ এর বীরত্ব - হযরত আলী রাঃ এর ঘটনা


প্রিয় পাঠক,

আজকে আমরা জানবো ইসলামের চতুর্থ খলিফা শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) কতটা শক্তিশালী ছিলেন এবং তাঁর বীরত্বের ঘটনা:

হযরত আলী রাঃ এর বীরত্ব

উহুদের যুদ্ধ ও বদরের যুদ্ধের পর আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দয়াতে মুমিনরা খুবই শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে দ্বিতীয় দিকে যারা কাফের এবং মুশরিক ছিলেন তারা খুবই দূর্বল হয়ে পড়েছেন, আর সবসময় ভাবতেন যে কিভাবে মুসলমানদেন ক্ষতি করা যায়। তাঁরা মুসলমানদের একেবারে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল মানে একটি পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনার ভিত্তি মুসলমানেরা একবারে শেষ, মুসলমানেদের চিরত্বরে শেষ করে দেওয়ার জন্য তারা একটি যুদ্ধের পরিকল্পনা করছিল। 
 
তাই ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে কাফের ও মুশরিকেরা এক সঙ্গে জোট বাঁধে এবং তারা মদিনার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলেন। এ কথা নবি করিম (সাঃ) এর কানে পৌছালো এবং নবি করিম (সাঃ) তার সকল সাহাবাদের নিয়ে বললেন, আমরা কয়েকজন মুসলিম এতো গুলো কাফের, মুশরিকদের মোকাবেলা কিভাবে করবো। এখান থেকে একমাত্র আল্লাহ তরফ হতে আমাদের সাহায্য আসবে এবং হক ও বাতিলের মধ্যে সত্য কোনটি তিনি নিধারণ করবে। 
 
এরই মধ্যে সকল সাহাবিগণ ভাবতে শুরু করলেন, এতগুলো মুশরিকদের সাথে আমরা কিভাবে লড়াই করবো, আর এদিকে সালমান বিন ফারসী (রাঃ) বলতে লাগেন, হে রাসুলুল্লাহ আমাদের মদিনা তো তিন রাস্তা দিয়ে বেষ্টিত যার মধ্যে হতে একটি রাস্তা খোলা, আমরা যদি সেই রাস্তাটিতে খনন করে রেখে দেই তবে তো কেউ আর প্রবেশ করতে পারে না। রাসুল (সাঃ) এই কথা শুনে সাথে সাথে সকল মুসলিমেরা মিলে সেই রাস্তাটি খননের কাজ শুরু করলেন এবং ছয় দিনের ভেতরে কাজ শেষ হয়ে গেল। মদিনাকে হেফাজত করার জন্য সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা, নয় কিলোমিটার চৌড়া ও চার মিটার গভীর খন্দক খনন করলেন। খন্দকের যুদ্ধে কাফের মুশরিকদের পক্ষ থেকে চাঁদের লিডার আবু সুফিয়ান সেই সময়কার সবচেয়ে বড় বীর আমর বিন মারহাব কে নিয়ে এসেছিলেন। সেইসময় বড় বড় পালওয়ানেরা তাকে খুব ভয় পেত। তারপর আমর বিন মারহাব ও বড় বড় পালওয়ানেরা মিলে মদিনার দিকে অগ্রসর হলো এবং সেখানে পৌছে তারা দেখতে পেল সেই খননকৃত জায়গাটি,, আমর বিন মারহাব দেখে খুব অবাক হলেন যে, এত কম সংখ্যক মানুষ মিলে এত কম সময়ে কিভাবে এত বড় খনন কাজ করলো।
 
কাফেরেরা সকলে সেখানে ছয়, সাত সপ্তাহ অপেক্ষা করতে লাগলো এবং আমর বিন মারহাব খুব রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, এটাতো আমাদের অসম্মান করা জন্য করা হয়েছে। আর আমি এখানে বসে মদিনাবাসীদের অপেক্ষা করবো না এখনি খাল টপকে মদিনায় প্রবেশ করবো, যেমন কথা তেমনি করেছে সে, খাল টপকে মদিনায় প্রবেশ করলো। সেখানে প্রবেশ করে আমর বিন মারহাব বলল যে, হে মদিনাবাসী মিথ্যাবাদী, কাপুরুষের দলেরা কোথায় তোমরা সাহস থাকলে আমার সামনে এসো না হয় আমার হাতে মৃত্যুবরণ করো,, তার এই কথা শুনে সকলে মাথা নিচু করে নিলেন। এরই মধ্যে হযরত আলী (রাঃ) উঠে বললেন যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি সেখানে যাবো, মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, হে আলী তুমি বসো, তুমি কি জাননা তোমার সামনে বিশ্ব সেরা পালওয়া আমর বিন মারহাব আছেন। তুমি তার সাথে মোকাবেলা করতে পারবে না, কেননা তুমি এর মোকাবেলা কারী নও। তুমি তোমার বয়স এখন কম। সে সময় আলী (রাঃ) এর বয়স ছিল ২৩ বছর। তারপর আমর বিন মারহাব আবার চিৎকার দিয়ে বলল যে, হে মুসলমানেরা কোথায় তোদের জান্নাত যেটা তোরা দাবি করিস, হেরে যাবি দেখে মাথা নত করিস, তোরা না শহিদ হলে জান্নাতে যাবি, তোদের মধ্যে কি এমন একজনও নেই যে জান্নাতের সুগন্ধি পেতে চাস।
 
সেখানে মুসলমাদের থাকা বড়-বড় পারওয়ানেরা ভয়ে বসে ছিল কেউ সাহস করে উঠতে পারছিল না। তারপর নবি করিম (সাঃ) আবারও বলেন যে, কে আছো তোমাদের মধ্যে যে এই কাফেরদের মুখ বন্ধ করে আসবে। কেউ দাঁড়ালেন না সবাই নিজের নজরগুলো নিচের দিকে রাখলেন কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) স্থির হয়ে থাকতে পারলেন না সে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং নবি করিম (সাঃ) এর কাছে হিয়ে বললেন, হে রাসুলুল্লাহ্ আমাকে একবার অনুমতি দিন আমি কাফেরদের মুখ বন্ধ করে আসবো, কিন্তু নবি করিম (সাঃ) বললেন, হে আলী তুমি কি জাননা তোমার সামনে আমর। তারপর নবি করিম (সাঃ) আবারও বলতে লাগলেন একই কথা, কে আছো সামনে এসে, কেউ এলেন না এবং সকলে বলতে লাগলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ আপনি কি জানেন না এই আমর বিন মারহাব এক হাতে উটের বাচ্চা রেখে আরেক হাত দিয়ে শতশত শুত্রুদের উপর তরবারি চালাই। এই শয়তানের সাথে কি লড়াই করবে। এরই মধ্যে হযরত আলী (রাঃ) তৃতীয় বারের জন্য খুব দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললে লাগলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ্ আমাকে একবার অনুমতি দিন আমি এই কাফেরের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে আসবো। তারপর রাসুল (সাঃ) তৃতীয় বারের সময় হযরত আলী (রাঃ) কে যাওয়ার অনুমতি দেন এবং হযরত আলী (রাঃ) এক হাতে ঠাল ও আরেক হাতে তরবারি নিয়ে আমর বিন মারহাব এর কাছে যান, আমর বিন মারহাবের পুরো শরীর ছিল লোহার চাদর দিয়ে ডেকেছে মানে মুখ থেকে পা পযন্ত সব লোহার তৈরিকৃত কাপড়। এদিকে আমর বিন মারহাব দেখে বলতে লাগলেন, তুমি কে হে যুবক, এখানে কেন মরতে চলে এসেছো? হযরত আলী (রাঃ) বলতে লাগলেন, আমাকে চিনে রেখো আমি হায়দারে কারা, আর বলে রাখি, হায়দার একটি শক্তিশালী সিংহের নাম ছিল আর কারার অর্থ হচ্ছে ফিরে ফিরে আক্রমণ করা তাই হযরত আলী (রাঃ) এর নাম রাখা হয়েছিল কারারে হায়দার মানে সিংহের মতো ফিরে ফিরে আক্রমণ কারী।
 
আমর বিন মারহাব আবারো বলতে লাগলেন যে, তুই যেখান থেকে এসেছিস সেখানে ফিরে যে বাবা, কারণ আমি ছোটেদের মারতে চাইনা। হযরত আলী (রাঃ) এই কথা শুনে বলতে লাগলেন, কিন্তু আমি যে তোকে মারতে আসছি। হযরত আলী (রাঃ) এর এই কথা শুনে আমর খুবই রাগান্বিত হলেন এবং তাকে আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে এলেন আর তাকে তরবারির মাধ্যমে একটি আঘাত করলেন যার ফলে হযরত আলী (রাঃ) এর ঠাল ভেঙে গেল এবং ঠাল ভেঙে যাওয়ার সাথে সেই তরবারির আঘাত আলী (রাঃ) এর ঘাড় মোবারকে লাগলেন এবং ক্ষত সৃষ্টি হলো সেখানে। তারপর হযরত আলী (রাঃ) কারারে হায়দার মানে ফিরে ফিরে আক্রমণকারী সিংহ আবার পূণরায় উঠে আমর বিন মারহাবের শরীরে জোরে একটি আঘাত করলো তরবারির মধ্যে যার ফলে আমর বিন মারহাবের শরীরে থাকা লোহার কাপড়ে পুরো কেটে মাটিতে পরে গেল এবং সেই সাথে আমর বিন মারহাব সেখানে দুই টুকরো হয়ে মরে গেল। ইতিহাস বলে যে, এই আঘাতটি এতটি স্ব জোরে ছিল যে লোহার কাপড় ভেদ করে তার শরীর দুই টুকরে পরিনত হয়েছিল। তারপর হযরত আলী (রাঃ) আমর বিন মারহাবের শরীর উপর পা তুলে বলতে লালো যে, তুই কি আমাকে শেষ করবি পাথরের পূজারী, আর আমি রাব্বি মুহাম্মাদের গোলাম। এরপরের দিন নবি করিম (সাঃ) সকল সাহাবিদের বলেন যে, আজ আমি একজনের হাতে বিজয়ের পতাকা তুলে দিবো, তিনি হলেন হযরত আলী। তারপর সকল সাহাবিরা বলতে লাগল যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ আলী (রাঃ) তো চোখ খুলতে পারছেন না চোখে ঝাপসা দেখছেন। নবি করিম (সাঃ) সাথে সাথে হযরত আলী (রাঃ) এর নিকট গেলেন এবং তার চোখে হাত বুলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে সে আগের মতো দেখতে পাচ্ছিলেন।

এরপর বিজয়ের পতাকা নিয়ে হযরত আলী (রাঃ) কাফেরদের কেল্লার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলেন এবং তাকে দেখে সকল সাহাবাইকেরামগণেদের মনে জোস, মনবল আরো বৃদ্ধি হতে শুরু করল। হযরত আলী (রাঃ) যখন ইয়াহুদিদের সেই কেল্লার নিকট চলে গেলেন তখন সেই কেল্লার দরজা বন্ধ ছিল এবং সেই দরজা খুলতে নাকি ৭০ জনেরও বেশি মানুষ লাগতো। কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) সেই কেল্লার দিকে এগুতে লাগলেন এবং এক হাত তরবারি নিয়ে যুদ্ধ করছেন ইয়াহুদিদের সাথে আর অন্য হাতে সেই দরজা ভেঙে দরজাটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর যতক্ষন পর্যন্ত না সকল আলাইমাইকেরামগণ সেই কেল্লার ভেতরে প্রবেশ না করে ততক্ষণ সেই দরজা এক হাতে ধরে ছিলেন। তারপর সকলে যখন প্রবেশ করলেন তখন তিনি সেই দরজাটিকে ঝুরে ফেললেন এবং সেই দরজাটি আলী (রাঃ) এর কাছ থেকে কয়েক গজ দূরে গিয়ে পড়লেন।

!! পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন “ইনশাআল্লাহ্” !!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url