তেলাকুচা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | তেলা কচুর পাতা খেলে কি কি উপকার হয়?

তেলাকুচা Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Coccinia grandis। সবুজ ফল পেকে সিঁদুর লাল বর্ণ ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা এ লতার ঝোপে বিচরণ শুরু করে। ফল দেখতে শসার মতো। স্বাদ তেতো। তেলাকুচার পাকা ফল ফলভোগী পাখির নিকট খুবই প্রিয়। বিশেষ করে বুলবুলি, বসন্তবৌড়ী, শালিক, বেনেবউ পাকা ফলের লোভে সারাক্ষণই এ লতার ঝোপে বিচরণ করে। সারা বছরই ফুল ফোটে। তবে বর্ষায় ফুলের প্রাচুর্য বেশি থাকে। ফুলের রং সাদা, দেখতে অনেকটা লাউ ফুলের মতো।

তেলা কচুর পাতা খেলে কি কি উপকার হয়?

বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান ধরণের উদ্ভিদ। সেই সকল উদ্ভিদের মধ্যে কিছু উদ্ভিদ যেমন আমাদের উপকারি, ঠিক তেমনি করে কিছু উদ্ভিদ আমাদের জীবনে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় প্রতিকার হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জীবন রক্ষার্থে এ সকল গাছ হয়ে উঠে আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। জরাজীর্ণ এই জীবনে এই সকল গাছ খানিকটা প্রশান্তির পরশ নিয়ে আসে আমাদের এই জীবনে।

বহুল পরিচিত ঝোঁপের মত ছড়ালো একটি গাছ হল তেলাকুচা পাতা। বাংলাদেশের আনাচে-কাচানে দেখা মেলে এই গাছের। এই গাছ লতানো ধরণের গাছ। মূলত অনেকে এর পাতা তরকারি কিংবা ঔষুধি হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।  

তেলাকুচা পাতা বা তেল পাতা হলো একটি প্রচলিত গাছ যা সাধারণত এশিয়া ও আফ্রিকার উপকূলে পাওয়া যায়। এই গাছের পাতা একটি গাছের প্রধান অংশ এবং এটি বিভিন্ন ধরণের পুষ্টির উৎস হিসাবে পরিচিত। তেলাকুচা পাতা বলতে সাধারণত বাংলায় বিভিন্ন উপায়ে বিভাজিত একটি প্রজাতি গাছের পাতার বৃত্তকে বোঝানো হয়। এই গাছের পাতা ব্যবহার করা হয় প্রাচীন চীনা চিকিৎসা এবং বাংলাদেশে চলছে অনেক দিনের চিকিৎসা প্রথা অন্যান্য দেশগুলিতে সাধারণ ব্যবহার অত্যন্ত ছড়িয়েছে।

এই গাছের নির্দিষ্ট বয়সে ছোট সাদা রঙের ফুল হয় এবং সেই  ফুল থেকে একসময় ফল হয়। এটি মূলত একটি ভেজক উদ্ভিদ হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। তবে এই তেলাকুচা উদ্ভিদটির ভোটানিক্যাল নাম হলো Coccinia grandis বা Coccinia Cordifolia Cogn। এটি মূলত  Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তেলাকুচার ভেষজ নাম হল Coccinia। তবে স্থানভেদে এই তেলাকুচা নানা স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। কোন কোন স্থানে এর নাম- তেলাকুচা, তেলাকুচো, কুন্দ্রি শাক, কুচিলা, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, কেলাকুচ, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে নানা ধরণের নামে পরিচিত এই গাছ।

তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

তেলাকুচা পাতার উপকারিতা অসংখ্য। এই পাতা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামিনো অ্যাসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি সমৃদ্ধ রয়েছে। তাই এই পাতা আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার হিসাবে পরিচিত। এই পাতার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা স্বাস্থ্যকর জীবনে অবদান রাখে এবং এটি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা যায় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়।

তেলাকুচা পাতা একটি ঔষুধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ পাতা। আমাদের মধ্যে অনেকেই খাবারে রুচিজনিত সমস্যা নিয়ে ভুগছি। অনেকেই খাবারে কোন ধরণের রুচি পায় না। আপনি যদি নিয়মিত তেলাকুচা পাতা সেবন করেন তবে দেখবেন খাবারে রুচি বৃদ্ধি আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। 

আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে খাবারের অনিয়মের কারণে পেটের মধ্যে নানা ধরণের সমস্যা যেমন পেটের পীড়া, পেট ব্যাথা ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত থাকে। আপনি যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে সমস্যাটি থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

তেলাকুচা পাতার রয়েছে এক বিশাল গুণ। নিয়মিত যদি আপনি তেলাকুচা খাওয়ার অভ্যাস করেন তবে এর ফল মানব শরীরের ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা আপনি নিজে লক্ষ্য করবেন। 

তেলাকুচা পাতা আমাদের শরীরে মেদ এবং অতিরিক্ত চর্বি পরিহারে বেশ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এই তেলাকুচা পাতা খাওয়ার ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ, সেই সাথে চর্বি কমাতে সাহায্য করে। 

তেলাকুচা আমাদের অবসন্যতা কাটাতে সাহায্য করে। তাই আমরা যাঁরা ডিপ্রেশন নামক মহামারী রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তাঁদের উচিত নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খাওয়া। 

স্নায়ু আমাদের মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম। অনেক সময় আমরা কখনো কোন কথা ভুলে যাই, কিংবা কোন ঘটনার কথা আমাদের মস্তিষ্ক খুব দেরিতে প্রতিক্রিয়া পায়। তা শুধুমাত্র স্নায়ুবিধ নানা সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। নিয়মিত তেলাকুচা পাতা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে ভালো রাখতে বেশ জোড়ালো ভূমিকা পালন করে।

আমাদের মাঝে অনেকের কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে। সেই সাথে এই সমস্যার কারণে নানা ধরণের জটিলতা দেখা দেয়। আপনি যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে তেলাকুচা পাতা খাওয়ার অভ্যেস করুণ। কারণ তেলাকুচা পাতা আমাদের কিডনিতে বিদ্যমান পাথর প্রতিরোধ করতে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করে। 

আমাদের অনেকের শরীরে জ্বরের সাথে সাথে হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানে খেতে পারেন তেলাকুচা পাতা। তেলাকুচা পাতা আমাদের শরীরে জ্বর এবং হাঁপানি প্রতিরোধ করতে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করে।

তেলাকুচা গাছের ফলের অপকারিতা

যদিও তেলাকুচা পাতার অনেক উপকারিতা আছে, তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছু অপকারিতা থাকতে পারে। কিছু মানুষের জন্য এই পাতা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে এবং এর অতিরিক্ত খাবারের উপকারিতা অপকারে পরিণত হতে পারে। এছাড়াও, যারা অ্যালার্জিক উত্তরপ্রাপ্ত তাদের জন্য এই পাতা খাওয়া উচিত নয়।

তেলাকুচা একটি লতানো উদ্ভিদ হলেও এর নির্দিষ্ট সময় ফল হয়। ফল দেখতে অনেকটা লালচে হয়, সেই ফলের বীজ থেকে নতুন চারা উৎপাদিত হয়। তবে এর ফল আমাদের কি ধরণের সাহায্য করে কিংবা এর ফল আমাদের কি উপকারে লাগে, কিংবা নিয়ে কোনো ধরণের চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে দরকার লাগে তা এখনো বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে গবেষণা করতে পারে বলে আশা করা যায়।


উদাহরণ স্বরূপ যদি বলা যায় তেলাকুচা গাছের ফলের অপকারিতা এই রকম:

অধিক পরিমাণে সিরোটোনিন: তেলাকুচা গাছের ফলে অধিক পরিমাণে সিরোটোনিন থাকে, যা মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি অতিরিক্ত উচ্চ মানসিক চিন্তা, অবসাদ এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

ব্রিন ও পরিস্রাব ব্যবহারে সমস্যা: তেলাকুচা গাছের ফলে ব্রিন ও পরিস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায়, যা পেটের সমস্যা এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার কারণ হতে পারে।

গাইস্ট্রিক সমস্যা: কিছু মানুষের জন্য তেলাকুচা ফল সেদ্ধ করা অসম্ভবও তেলাকুচা গাছের ফলের মধ্যে রয়েছে এমন একটি আমিন যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে।

অ্যালার্জি এবং ত্বক সমস্যা: কিছু মানুষের জন্য তেলাকুচা ফল অ্যালার্জি বা ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ত্রিগ্লিসেরাইড এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধি: তেলাকুচা ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে ত্রিগ্লিসেরাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে যেটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

পেটের সমস্যা: অধিক পরিমাণে খাওয়ার সময়ে তেলাকুচা ফল পেটে বন্ধ হতে পারে এবং অনির্ণয় পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

সামগ্রিকভাবে মনে রাখা উচিত যে, তেলাকুচা ফল উপভোগ করতে হলে এটি মধ্যম পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যগতভাবে প্রস্তুত করা উচিত। এছাড়াও, এটি যদি যেতে বলে তা হলে একটি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

তেলাকুচা পাতা একটি অত্যন্ত উপকারিতা এবং পুষ্টিকর খাবার। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান এবং প্রাচীন সময়ে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক প্রকারে খাওয়া প্রয়োজন। এই পাতার ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে অবশ্যই হবে।

তাই তেলাকুচা পাতা নিয়ে আমাদের আলোচনা শেষ করতে চাইলে আমাদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা হয়ে গেছে। এই প্রাচীন গাছের পাতা এখন আধুনিক চিকিৎসার জগতেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে।

আমরা আশা করছি আমাদের পোস্টটি পড়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পেয়েছেন এবং তেলাকুচা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | তেলাকুচা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url