কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত - কিডনি পরিষ্কার করার ঔষধি ঔষধ কোনটি?

কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত জল ছেঁকে বের করে। কিডনির সমস্যার কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হতে পারে। কিডনি সমস্যার সময় সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এখানে আমরা কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কিডনি পরিষ্কার করার ঔষধি ঔষধ কোনটি

পোস্ট সূচীপত্র: কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত - কিডনি পরিষ্কার করার ঔষধি ঔষধ কোনটি? 

প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে

কিডনির সমস্যা হলে প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তাই প্রোটিনের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে। আপনাকে সে-সময় কম প্রোটিনযুক্ত খাদ্য খেতে হবে। যেমন:

  • শাকসবজ হিসেবে খেতে পারেন: সবুজ শাকসবজি, ব্রোকলি, পালং শাক।
  • ফলমূল: আপেল, নাশপাতি, আঙ্গুর।
  • শস্য: লাল চাল, ওটমিল, গোটা গমের রুটি।

লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে

কিডনির সমস্যা হলে লবণের পরিমাণ কমানো উচিত। লবণ কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে। তাই কম লবণযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যেমন:

  • তাজা ফল ও সবজি: টমেটো, শসা, গাজর
  • কম লবণযুক্ত স্ন্যাকস: আনসলটেড বাদাম, পপকর্ন
  • স্বাস্থ্যকর বিকল্প: লবণের বদলে লেবুর রস, ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে

পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে

কিডনির সমস্যা হলে পানি গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। অতিরিক্ত পানি কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি গ্রহণ করা উচিত। আপনি চাইলে পানির বিকল্প হিসেবে এগুলো খেতে পারেন যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার।

  • তাজা ফলের রস: লেবুর রস, আপেলের রস (চিনি ছাড়া)।
  • হার্বাল চা: ক্যামোমাইল চা, পিপারমিন্ট চা।

যে সমস্থ খাদ্য পরিহার করতে হবে

কিডনির সমস্যা হলে কিছু খাদ্য সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা উচিত। এগুলি কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে। 
যেমন অত্যধিক প্রোটিনযুক্ত খাদ্য হিসেবে ধরা হয়:

  • লাল মাংস: গরুর মাংস, খাসির মাংস।
  • প্রক্রিয়াজাত মাংস: সসেজ, হ্যাম।

অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাদ্য

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: চিপস, প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকস।
  • ক্যানড খাবার: ক্যানড স্যুপ, ক্যানড সবজি।

উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাদ্য

  • ফল: কলা, কমলা।
  • সবজি: টমেটো, পালং শাক।

উচ্চ ফসফরাসযুক্ত খাদ্য

  • দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, পনির।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার।

কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত

কিডনি সমস্যায় আয়ুর্বেদি চিকিৎসা কেমন?

প্রথমে জানিয়ে রাখি আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বলে, এমন চারটি মসলা আছে যেগুলো নিয়মিত সেবন করলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম এবং ক্ষতিগ্রস্থ কিনডকে পরিষ্কার করতে, পরিষ্কার রাখতে, সুস্থ করতে এই চারটি মসলাকে বলা হয় যুগান্তকারী মসলা। তাই কিডনি রোগীদের শরীর, স্বাস্থ্য ও কিডনি রোগ থেকে উত্তোরণ হওয়ার জন্য এই চারটি মসলাকে ইউনানী ও আয়ুর্বেদি চিকিৎসায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মসলা বলা হয়েছে। চলুন তবে জেনে নেই সেই চারটি মসলা কী কী:

০১. উপরে যে মসলাটিকে দেখতে পাচ্ছেন তার নাম হলো ত্রিফলা। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এই ফলটি খুবই উপকারী। মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজের অনুপাত করে পৃথক শরীরের ধরনের উপর নির্ভর করে যে মিশ্রণটি বানানো হয় সেটিকে বলা হয় ত্রিফল। ০১. হরদ, ০২. বহেড়া ও ০৩. আমলা। তো এই তিনটার মিশ্রণে ত্রিফলা হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আপনাকে খালি পেটে বা খাওয়ার পরে এই ত্রিফলা খেতে হবে। যারা শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষ তারা যদি ত্রিফলা খেতে চান সেক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা বলে থাকেন, একজন সুস্থ মানুষ চাইলে ত্রিফলা খেতে পারেন তবে নিয়ম মাফিক, যেমন: আধা চামচ ত্রিফলা পাউডার যা চা এর মতো করে দিনে দুইবার খেতে পারেন। ত্রিফলা পাউডার আপনারা ঘি বা মধুর সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে যেহেতু এই দুটি খাবারের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া আছে। অর্থাৎ ঘি এবং মধুর সেই ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় শুধু আপনারা পানির সাথে আধা চামচ ত্রিফলা পাউডার মিশিয়ে দিনে সর্বোচ্চ দুইবার খেতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে একবার করেই শুরু করুন।

০২. দ্বিতীয় মসলাটি হচ্ছে হলুদ। হলুদে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়ুর্বেদের অন্যতম শক্তিশালী ঔষুধ হলো হলুদ। মনে রাখবেন পূর্বে বলা হয়েছে ত্রিফলার কথা এটা সেবন করলে কিডনি ও লিভার দুটোই সুস্থ থাকে। একইভাবে হলুদ যদি আপনারা সেবন করেন তাহলেও কিন্তু এটা কিডনি এবং লিভার দুটিরই উপকার করবে। তো আপনি যদি আগের দিন ত্রিফলা খেয়ে থাকেন তাহলে পরের দিন হলুদ মেশানো পানি খেতে পারেন। তবে সাধারণত হলুদ খাওয়ার আমাদের বাংলাদেশী নিয়ম হচ্ছে , আমরা দুধের সাথে এক চিমটি বা দুই টিমটি হরুদ মিশিয়ে খেয়ে থাকি। এভাবে খেলেও কিন্তু আপনারা উপকার পাবেন। তবে মনে রাখুন, আপনি যদি সকালবেলা হলুদ মিশানো পানি খান তবে দুই চিমটি হলুদ নিয়ে একটু উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি শুধু কিডনি নয় বরং হৃদপিন্ড লিভারকে সুস্থ রাখে। এতে থাকা ঔষুধি গুণ কিডনির সংক্রমণ করার পাশাপাশি মুত্রনালির সমস্যাও কমায়।
০৩. তৃতীয় মসলাটি হচ্ছে ধোনে পাতার বীজ যা সবার রান্না ঘরেই থাকে। এই পাতা বীজে উপস্থিত মূত্রবর্ধক উপাদান আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এখন আসি এটি আপনি সেবন করবেন কিভাবে:

১০ গ্রাম ধোনে পাতা বীজকে গুড়ো করে ০২ লিটার পানিতে এক রাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকাল থেকে সারাদিন যত পানি খাবেন ওই ০২ লিটার পানি থেকে এক গ্লাস বা দেড় গ্লাস করে পানি খেতে থাকবেন। সারাদিনে খাবে। এই পানিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যেটা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ হতে সহজেই মু্ক্তি দেয়। হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়, পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখে এমনকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

০৪. চতুর্থ যে মসলাটি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো সেটি হলো আদা। আদার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই কম-বেশি জানি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে যুগ-যুগ ধরে আদা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর আপনি এটি কিভাবে সেবন করবে সেটি জানা যাক এবার:

আপনার কিডনিকে পিউরিফাই করতে আদা প্রতিদিন সকালে একগ্লাস উষ্ণ গরম পানির সাথে ৫০ গ্রাম সমপরিমাণ আদার টুকরোকে ভালোভাবে থেঁতো করে উষ্ণ পানির সাথে মিশিয়ে সে পানিটা খেয়ে ফেলবেন।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এই চারটি মসলা কী আমরা দৈনিক সেবন করবো। আয়ুবের্দ ও ইউনান শাস্ত্র বলে, আপনি চাইলে ধারাবাহিকভাবে চারদিনে চারটি মসলা পানি খেতে পারেন। যেমন: প্রথম দিন সেবন করলেন ত্রিফলা সেবন করলেন। দ্বিতীয় দিন হলুদ মেশানো পানি সেবন করলেন। তৃতীয় দিন ধোনে পাতার বীজের পানি সেবন করলেন এবং চতুর্থ দিনে আদা মেশানো পানি। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন দিন আপনার সেবনের ধরণ পরিবর্তন করলে দেখতে পাবেন আপনার শরীরে একটা অন্যরকম ধারণ ক্ষমতা চলে আসবে এবং আপনি চাঙ্গা হয়ে যাবে।  

শেষাংশ

কিডনির সমস্যা হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস কিডনির উপর চাপ কমায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিন, লবণ, পটাশিয়াম এবং ফসফরাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং পানি গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করে কিডনির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। 

আমরা আশা করছি আমাদের পোস্টটি পড়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পেয়েছেন এবং কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত - কিডনি পরিষ্কার করার ঔষধি ঔষধ কোনটি? সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url