আলসার হলে কি লেবু খাওয়া যাবে
আমাদের অনেক মনে প্রশ্ন জাগে যে আলসার হলে কি লেবু খাওয়া যাবে কি যাবেনা। বিষয়টি আমরা অনেক জায়গা অনেকভাবে জেনে থাকে কিন্তু সমাধান মেলেনা। চলুন তবে আজকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক আলসার হলে কি লেবু খাওয়া যাবে কি যাবেনা?
লেবু একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল যা স্বাস্থ্যকর এবং মজার একটি খাবার। এটি বহুল সাধারণ প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ এবং সি’তে ভরপুর। লেবুর অনেক উপকারিতা রয়েছে আবার এর অপকারিতাও রয়েছে। আজকে আমরা জানবো আমাদের আলসার হলে কি লেবু খাওয়া যাবে কি না? তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলুন বিস্তারিত জানা যাক এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচীপত্র: আলসার হলে কি লেবু খাওয়া যাবে?
আলসার কী?
আলসার হওয়া কারণ কী?
- খাদ্য গ্রহণে অনিয়ম,
- অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণ,
- ধূমপান বা মদ্যপান,
- বিভিন্ন প্রদাহবিরোধী ওষুধ নিয়মিত সেবন,
- মানসিক চাপ,
- কম ঘুম।
আপনার আলসার হয়েছে কি না সেটি কিভাবে বুঝবেন বা এর লক্ষণসমূহ কী কী হতে পারে?
- পেটে জ্বালাপোড়া,
- অসহনীয় ব্যথা,
- পেট ফুলে যাওয়া,
- বমি-বমি ভাব,
- রক্তবমি,
- কালো পায়খানা,
- শ্বাসকষ্ট,
- ক্ষুধামান্দ্য,
- ওজন কমা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন কতটুকু লেবু খাওয়া উচিত - প্রতিদিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা
আলসার হতে বাঁচার উপায় কী এবং উক্ত সময় আমাদের করণীয় কী?
- নরম ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া,
- দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা যাবে না,
- সারা দিনের খাবারকে ছয়-আটবার ভাগ করে খেতে হবে,
- পেটে গ্যাস হয়, এমন খাবার বাদ দিতে হবে,
- ঝাল-মসলাযুক্ত ও তেলে ভাজা খাবার না খাওয়া,
- ধূমপান, মদ্যপান ছাড়তে হবে,
- চা, কফি বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার এড়াতে হবে,
- প্রক্রিয়াজাত খাবার, টিনজাত খাবার, ভাজা বাদাম ইত্যাদি বাদ দিতে হবে,
- শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে ভাত, নরম খিচুড়ি, সুজি, সাগু, বার্লি ইত্যাদি খাওয়া যায়,
- ননিবিহীন ও ল্যাকটোজমুক্ত দুধ, দই অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে,
- টকজাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না, যেমন- কমলা, লেবু, মাল্টা ইত্যাদি,
- তাজা ফল ও সবজি খাবার তালিকায় রাখতে হবে, যেমন- আপেল, আঙুর, কলা, ডালিম ইত্যাদি,
- সবজির মধ্যে নরম শাক, লাউ, চালকুমড়া, পেঁপে, বাঁধাকপি, গাজর, আলু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে,
- প্রতিদিনের খাবারে ডিম, নদীর বা সামুদ্রিক মাছ, মুরগির মাংস (চর্বি ছাড়া/চামড়া ছাড়া) থাকতে পারে,
- মূল কথা হলো- সঠিক খাবার পরিকল্পনা ও সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চললে পেপটিক আলসার অবশ্যই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- ফারজানা ওয়াহাব (পুষ্টিরোগ বিশেষজ্ঞ) -
লেবু খাওয়ার উপকারিতা:
০১. আলসার হলে লেবু একটি ভালো পদ্ধতি কি?
- আলসারে ভালো পদ্ধতি হলো লেবু খাওয়া। লেবুর আলসারের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং প্রতিদিন একটি নিয়মিত লেবু খেলে অল্প আলসার হতে পারেন।
- খাবারের রুচি বাড়াতে লেবুর কোনো কথায় নেই। যাদের মুখে রুচি কম, খাবার খেতে পারেন না তাদের জন্য লেবু খুবই কার্যকর।
- যাদের পেপটিক আলসার অথবা অ্যাসিডিটি রয়েছে, তারা খাবার সময় লেবু এড়িয়ে চলেন। তাদের ধারণা লেবু খেলে আলসার ও অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে যাতে পারে। তবে এই ভুল ধারণা নিয়ে যারা বসে আছেন তাদের জন্য সু-খবর হচ্ছে লেবু খেলে পেটে অ্যাসিডিটি হয় না, উল্টো অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।
- লেবুতে আছে সিট্রিক অ্যাসিড। যা পাকস্থলীর সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সাইট্রেইট, পটাশিয়াম সাইট্রেইট ইত্যাদি যৌগ তৈরি করে। পাকস্থলী থেকে ক্ষরিত হয় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। যার পরিমাণ বেশি হলে বুক-জ্বালা, গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
তাই সুস্থ থাকতে আমাদের টকজাতীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
আরও পড়ুন: খালি পেটে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
০২. লেবু প্রচুর ভিটামিন সি থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) শক্তিশালী করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকা (হোয়াইট ব্লাড সেল) উৎপাদনে সাহায্য করে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব: ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলগুলোকে নিরসনে সাহায্য করে, যা কোষের ক্ষতি কমিয়ে আনে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে।
- চর্মের সুস্বাস্থ্য: ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং সজীবতা বজায় রাখতে সহায়ক। এটি ত্বকের বলিরেখা কমাতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
- আয়রন শোষণ: ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণে সহায়তা করে, যা রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন সি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- হাড় ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য: ভিটামিন সি হাড় এবং দাঁতের গঠনে সহায়ক। এটি হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে এবং মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
- সাধারণ ঠান্ডা ও সর্দি: ভিটামিন সি সাধারণ ঠান্ডা এবং সর্দির উপসর্গ হ্রাস করতে পারে এবং দ্রুত সেরে উঠতে সহায়ক।
- মানসিক স্বাস্থ্য: ভিটামিন সি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এটি মেজাজ উন্নত করতে এবং বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
০৩. কিভাবে লেবু বিভিন্ন রোগে সাহায্য করে?
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি বিভিন্ন সংক্রমণ, যেমন সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর, এবং গলা ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- হজমের সমস্যা: লেবুর রস হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি হজমে সহায়ক এনজাইম সক্রিয় করে এবং পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক, ও বদহজম প্রতিরোধ করে।
- ত্বকের সমস্যা: লেবুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং বলিরেখা ও ফুসকুড়ি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি অ্যাকনে এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: লেবুর মধ্যে পটাশিয়াম থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
- ওজন কমানো: লেবুর রসে ক্যালোরি কম থাকে এবং এটি শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। সকালে গরম পানির সাথে লেবুর রস খেলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
- কিডনির পাথর: লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা কিডনির পাথর গঠনের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত লেবুর রস পান করলে কিডনির পাথর গলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: লেবুতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লেবুর রস পান করলে রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি রোধ করা যায়।
- লিভারের স্বাস্থ্য: লেবু লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়ক। এটি লিভারের এনজাইম সক্রিয় করে এবং ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
- শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা: লেবুর ভিটামিন সি শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। এটি শ্বাসনালী খুলে দেয় এবং শ্বাসকষ্ট কমায়।
- প্রদাহ: লেবুর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের উপশমে সহায়ক।