জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম - জমি বন্ধক চুক্তি পত্র

আমাদের অনেকেরই জমি রয়েছে যেগুলোতে আমরা বসবাস করে থাকি। আবার এমন কিছু জমি রয়েছে যেগুলো আমাদের ব্যবহারে আসেনা। সেই জমিগুলোকে আমরা কাজে না লাগিয়ে অযথা ফেলে রাখি। কিন্তু আমরা যদি সেই জমিগুলোকে অন্য কারো নিকট বন্ধকে রাখি তবে আমাদের যেমন লাভ হবে ঠিক তেমনভাবে যে জমিটি বন্ধক নিবে তারও অনেক লাভ হবে।

জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম

মাঝে মাঝে আমাদের টাকার বিশেষ প্রয়োজনে হওয়া আমরা এই জমিগুলোকে বন্ধকে রাখি রাখতে পারি। এতে আমাদের হাতে কিছু টাকা আসবে। তবে জমিগুলোকে বন্ধকে রাখার জন্য আমাদের সর্বপ্রথম জমি বন্ধক নামা লেখার প্রয়োজন হয়। যা আজকে আমরা এই লেখার মাঝে আলোচনা করবো “জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম - জমি বন্ধক চুক্তি পত্র”।

পোস্ট সূচীপত্র: জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম - জমি বন্ধক চুক্তি পত্র

জমি বন্ধন নামা লেখার নিয়ম সম্পর্কে ভূমিকা

আমরা অনেকেই জমি বন্ধক দিয়ে থাকি। তবে এটি দেওয়ার পূর্বে আমাদের ১ম পক্ষ (মালিকপক্ষ) ও ২য় পক্ষ (যে বন্ধক নিবে) উভয় পক্ষের মাঝে একটি চুক্তি হয় যেটিকে আমরা বলে থাকি- “জমি বন্ধক নামা”। এই বন্ধক নামা মূলত ১০০ টাকা তিনটি স্ট্যাম্পের উপর মোট ৩০০ টাকা স্ট্যাম্পে করা হয়। তবে আপনি যদি চান তবে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে অথবা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পের মধ্যেও করতে পারেন। তবে বলে রাখা জরুরী যে, ১০০ টাকা তিনটি স্ট্যাম্পের উপর মোট ৩০০ টাকা স্ট্যাম্পের মধ্যে যদি এটি করেন তবে বন্ধক নামাটি খুবই পাকাপক্ত বলে বিবেচিত হয়। আর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রকারে চুক্তিপত্র, বায়না নামা, বন্ধকনামা এ জাতীয় বিষয়গুলোকে ৩০০ টাকা স্ট্যাম্পের মধ্যে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।

আমরা আজকে ‘জমি বন্ধন নামা লেখার নিয়ম’ সম্পর্কে লেখাটি সাজিয়েছি এবং জমি বন্ধক নামা লেখাটি মোট তিন (০৩) টি পাতায় করা হয়েছে। আপনি এভাবে খুবই সহজে আপনার বন্ধক নামাটি করতে পারবেন বলে আমরা বিবেচনা করছি।

জমি বন্ধক নামার পাতা নং- ০১

"জমি বন্ধক নামার চুক্তিপত্র"

১ম পক্ষ (মালিকপক্ষ/দাতা): মো: আব্দুস সালাম মন্ডল, পিতা- মৃত আব্দুস সাত্তার, জাতি- মুসলিম, পেশা- ব্যবসা, সাং- রাঘবিন্দ্রপুর (নতুন পাড়া), ডাকঘর- বড়পুকুরিয়া, উপজেলা- পার্বতীপুর, জেলা- দিনাজপুর।

জমি বন্ধক নামা
মূল্য=৫,০০,০০০/- 
(পাঁচ লক্ষ) টাকা
মৌজা- ………
জমি= ৪২ শতক
মেয়াদ- ০৩ (তিন) বৎসর

২য় পক্ষ (গ্রহীতা): শ্রী ব্রজেন চন্দ্র সরকার, পিতা- সরৎ চন্দ্র সরকার, জাতি- হিন্দু, পেশা- গৃহস্থী, সাং- রাঘবিন্দ্রপুর (পুরাতন পাড়া), ডাকঘর- বড়পুকুরিয়া, উপজেলা- পার্বতীপুর, জেলা- দিনাজপুর।

        পরম করুনা ময়ের নামে বন্ধকনামা দলিল লেখা আরম্ভ করিতেছি যে, আমি ১ম পক্ষ আমার সাংসারিক বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় অন্য কোন উপায়ে টাকা সংগ্রহ করিতে না পারায় আমি আমার ভোগ দখলীয় নিম্ন তফসিল বর্ণিত জমি বন্ধক রাখিবার মৌখিক প্রস্তাব করিলে ২য় পক্ষ বন্ধক লইতে ইচ্ছুক হইলেন মতে পোনবাহা মবলকে =৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা উপস্থিত স্বাক্ষীগণের সম্মুখে নগদ একযোগে বুঝিয়া পাইয়া এবং জমি দখল আপনার বরাবর ছাড়িয়া দিয়া আমি অঙ্গিকার ও স্বীকার করিতেছি যে, অদ্যকার ০৮/০৯/২০২৪ইং তারিখ হইতে শুরু করিয়া আগামী ০৩ (তিন) বৎসর অর্থাৎ ০৭/০৯/২০২৭ইং পর্যন্ত বন্ধকী জমি আপনি নিজ দখলে লইয়া চাষাবাদ করিয়া ভোগ দখল করিতে পারিবেন। তাহাতে আমি বা আমার কোন ওয়ারীশগণ কোন প্রকার ওজর আপত্তি গ্রহণযোগ্য হইবে না। 
চলমান পাতা নং- ০২

জমি বন্ধক নামার পাতা নং- ০২

পাতা নং-০২

যদি মেয়াদ শেষ হইবার পরেও আমি আপনার বন্ধককৃত টাকা আপনাকে ফেরৎ না দেই, কিংবা টাকা ফেরৎ দিতে কোন প্রকার টাল বাহনা গড়িমশি করি, তাহা হইলে পনুরায় আমাদের উভয়ের মধ্যে আলাপ আলোচনা করিয়া বন্ধক জমির মেয়দ বৃদ্ধি করা হইবে। তার পরেও যদি আপনি আমার অবহেলা দেখেন বা বুঝেন তাহালে আপনি এই দলিল বলে আমার বিরুদ্ধে সামাজিক বা আইনগত; ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া আপনি আপনার বন্ধককৃত =৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা আমার নিকট হইতে আদায় করিয়া লইতে পারিবেন। উল্লেখ্য যে, লিখিত মেয়াদ শেষ হইবার পরেও আমি আপনার গ্রহণকৃত টাকা পরিশোধ করিতে ব্যর্ত হই তাহা হইলে যতদিন পর্যন্ত বন্ধককৃত টাকা পরিশোধ করি নাই ততদিন পর্যন্ত আপনি আমার জমি-জমা চাষাবাদ করিয়া ফসলাদী ফলাইয়া ভোগ দখল করিতে পারিবেন। বন্ধককৃত টাকা পরিশোধ করিয়া দিলে আমার জমি-জমা আমার বরাবরে ফেরৎ আসিবে। প্রকাশ থাকে যে, হায়াত মউত এর কথা বলা যায় না আমার অবর্তমানে আমার জের ওয়ারিশ আপনাকে আমার গ্রহণকৃত টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য থাকিবে।


আরও প্রকাশ যে, বন্ধককৃত টাকা উদ্ধার করিতে আমার বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা করার প্রয়োজন হয় তাহা হইলে মামলা মোকদ্দমার যাবতীয় খরচ ও টাকার ক্ষতি পুরণসহ আপনি আমার নিকট হইতে আদায় করিয়া লইতে পারিবেন। আমি তাহা দিতে বাদ্য থাকিব ও কৃত অপরাধের জন্য আইনগত দন্ডনীয় হইব।  
চলমান পাতা-০৩

জমি বন্ধক নামার পাতা নং- ০৩

পাতা নং- ০৩

এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায় সুস্থ্য শরীরে নিজ জ্ঞানে অন্যের বিনা-নুরোধে খোশ মেজাজে স্বাক্ষীগণের সম্মুখে- ৯০,০০০/- (নব্বই হাজার) টাকা নগদ একযোগে বুঝিয়া পাইয়া অত্র বন্ধক নামা দলিল পড়িয়া ইহার মর্ম অবগত হইয়া নিজ নাম সহি সম্পাদন করিলাম। ইতি- ০৮/০৯/২০২৪ইং


১ম পক্ষ: ...............................        ২য় পক্ষ: .............................

তফশীল:
জেলা- দিনাজপুর, উপজেলা- পার্বতীপুর, মৌজা- পূর্ব বাজিতপুর, জে,এল নং- ১৩৬।

খতিয়ান নং-

দাগ নং-

রকম    -

পরিমাণ

 

 

 

 

মবলকে ৪২ (বিয়াল্লিশ) শতক জমি আপনার নিকট বন্ধক রাখিলাম।

অত্র দলিল পড়িয়া অবগত হইলাম।

স্বাক্ষী গণের নাম ও ঠিকানাঃ

১। নামঃ
    পিতাঃ
    গ্রামঃ

২। নামঃ
    পিতাঃ
    গ্রামঃ

৩। নামঃ
    পিতাঃ
    গ্রামঃ

এখান থেকে ৩য় পাতার লেখা শেষ এবং আপনি যদি আমাদের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তবে জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম (০৩)টি পেইজে কি কি লেখা থাকে সে সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পেরেছেন বলে আমরা মনে করি।

বায়না নামা দলিল ফরমেট

জমি বন্ধক রাখার পূর্বে সতর্কতা

আমরা মূলত জমি বন্ধক রাখি দুটি কারণে। ১. জমিটি কোনো কাজে আসেনা দেখে আমরা এটিকে বন্ধক রাখি এবং এটি আশা করি যে, জমিটি বন্ধক রাখলে হাতে কিছু টাকা পাবো এবং ২. যাকে জমিটি বন্ধক দিবো তার যেন একটু উপকার হয় সেদিকটি লক্ষ্য রেখে আমরা বন্ধক দিয়ে থাকি। তবে জমি বন্ধক রাখার সময় আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করবো তা না হলে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। নিচে কিছু সতর্কতা বলা হলো:

  • আপনি যাকে জমিটি দিবেন সে আপনার বিশ্বস্ত কিনা তা আগে যাচাই করুন।
  • জমিটি বন্ধক দেওয়ার সময় অবশ্যই উভয়ের মাঝে একটি চুক্তিপত্র করে নিবেন যেটিতে সকল শর্তাবলী উল্লেখ থাকে।
  • জমিটি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সে আপনাকে আপনার জমিটি আপনার নিকট ফিরিয়ে দিবে কিনা সেটি ভালো মতো যাচাই করুন কেননা এখন কেউ কাউকে তেমন ভরসা করতে পারেনা। জোর-জবর করে দখল করে নেয়। তাই যাচাই-বাছাই করে আপনি অন্য কাউকে জমি বন্ধক দিবেন।

শেষাংশ

আজকের লেখার আমরা শেষ পর্যায়ে এসে পৌছে গেছি। তাই শেষাংশে বলা যায়- জমি বন্ধকের পূর্বে অবশ্যই আমরা সতর্কতার সাথে অন্য কারো নিকট জমি বন্ধক রাখবো। জমি বন্ধক দেওয়ার আগে আমরা একটি জমি বন্ধক নামার চুক্তিপত্র করে নিবো যাতে করে ভবিষ্যৎ আমাদের উভয়ের কোনো ক্ষতি না হয়। জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম সম্পর্কে অবগত হয়ে আমরা বন্ধকী দলিল লিখবো এবং যেটি আমরা উপরে লিখে এসেছি সে অনুযায়ী লিখবো এবং যদি পারেন তবে নিজের মতো করে কিছু শর্তও যুক্ত পারেন তবে সেটি যেন যুক্তিযুক্ত হয়।

আমরা আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম - জমি বন্ধক চুক্তি পত্র লেখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্যগুলোকে উপস্থাপন করা এবং পৌঁছে দেওয়া এবং এতে আপনাদের সহযোগীতা আমরা একান্তভাবে কাম্য করছি। লেখাটি আপনাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আরো অন্যান্যদের নিকট শেয়ার করে তাদেরও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানার সুযোগ করে দিন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url